ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাওয়ার ৮ বছর পর মাইদুলকে ফিরে পেল মা

পটুয়াখালী থেকে ঢাকার তুরাগে এসে হারিয়ে যাওয়ার আট বছর পর মাকে ফিরে পেয়েছে মাইদুল ইসলাম নামের এক কিশোর।

হারিয়ে যাওয়ার সময় মাইদুল ইসলামের বয়স ছিল ১০ বছর। ১৮ বছর বয়সে সে তার মাকে ফিরে পেয়েছে। মাঝের আটটি বছরের বড় একটি সময় কেটেছে পটুয়াখালী শহরে ফটোস্ট্যাটের দোকানে কাজ করে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আমতলী উপজেলার টেপুড়া গ্রামের মতিন মুন্সির মেয়ে বিলকিস বেগমের সাথে ১৯৯৭ সালে পাশের পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর গ্রামের রুহুল আমিন খন্দকারের বিয়ে হয়। যৌতুকের জন্য বিয়ের পর থেকেই স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বিলকিস। এর মধ্যেই তার কোল জুড়ে আসে শিশু মাইদুল ও কন্যা তামান্না। নির্যাতন চলতে থাকায় সাত বছর পর তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বিলকিস মাইদুল ও তামান্নাকে নিয়ে ঢাকার তুরাগে চলে যায়। চাকরি নেন একটি তৈরি পোশাক কারখানায়। ছেলে মাইদুলকে ভর্তি করিয়ে দেন পাশের একটি মাদ্রাসায়।

২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মোবাইল রিচার্জের দোকানে টাকা দিতে গিয়ে পথ হারিয়েছিল মাইদুল। সেসময় ঘুরতে ঘুরতে সে পৌঁছায় সদর ঘাটে। পটুয়াখালীর মকবুল হোসেন মাষ্টার শিশু মাইদুলকে অসহায় অবস্থায় পেয়ে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। অনেক খুঁজেও ছেলেকে না পেয়ে বিলকিস ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তুরাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ছেলেকে হারিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন বিলকিস।

অন্যদিকে মকবুল মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান পটুয়াখালী জজ কোর্টের সামনে তার ফটোস্ট্যাটের দোকানে কাজ দিয়েছিল মাইদুলকে। এই দোকানে চার বছর কাজ করেছে মাইদুল। এর মধ্যেই শহরে তার বেশ বন্ধু-বান্ধবও জুটে গেছিল। ঘনিষ্ট বন্ধুদের মধ্যে মো. মোস্তফা ও মাসুদের কাছে সে তার সব ঘটনা খুলে বলে। ওই দুই বন্ধু মাইদুলের মায়ের খোঁজ করতে শুরু করে। মোস্তফা তার বড় ভাই ইসলামী আন্দোলনের পটুয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অহিদুজ্জামানকে বিষয়টি জানালে অহিদুজ্জামান আমতলী উপজেলার কাঁঠালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবু ছালেহর সঙ্গে যোগাযোগ করে মাইদুলের মায়ের ঠিকানা বের করেন।

মাইদুলকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে অহিদুজ্জামান ও শিক্ষক আবু ছালেহ পটুয়াখালী থানার ওসি আক্তার মোর্শেদের সাথে যোগাযোগ করেন। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মুকিত হাসান, ওসি আখতার মোর্শেদের উপস্থিতে মাইদুলকে তার মায়ের হাতে তুলে দেন।

ছেলেকে ফিরে পেয়ে পুলিশসহ সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মাইদুলের মা বিলকিস বেগম।

মাইদুল বলেন, আট বছর পরিবার থেকে দূরে ছিলাম। এখন পরিবারকে ফিরে পেয়ে আমি আনন্দিত।

আনন্দবাজার/তা.তা

সংবাদটি শেয়ার করুন