মেয়ে অসুস্থ, মেয়ের শ্বশুরের কাছ থেকে ফোন কলে এমন সংবাদ পেয়ে যশোর থেকে নাটোরে ছুটে আসেন মা নুজহাত বেগম। এসে দেখেন, হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে মেয়ের লাশ। শ্বশুর, স্বামী বা তাঁদের পরিবারের কেউ ছিলনা সেখানে। মা নুজহাতের অভিযোগ, নির্যাতন করে তাঁর মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস সুমাইয়া বেগমকে হত্যা করেছেন তার স্বামীর বাড়ির লোকজন।
যশোরের সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে সুমাইয়া বেগম। বিয়ে হয়েছিল নাটোর শহরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার প্রকৌশলী মোস্তাক হোসাইনের সাথে।
মা নুজহাত বেগম জানান, গতকাল সোমবার সকালে মেয়ে সুমাইয়ার শ্বশুর জাকির হোসেন আমাকে কল করেন। তিনি মেয়ের অসুস্থতার কথা জানান। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। মেয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে আমি দ্রুত নাটোরে চলে আসি। নাটোর সদর হাসপাতালে এসে দেখি, আমার মেয়ের মৃতদেহটা মর্গে পড়ে আছে। শ্বশুরবাড়ির কেউ নেই হাসপাতালে। তিনি আরও বলেন, বিয়ের পরপরই শ্বশুরবাড়ির লোকজন সুমাইয়ার পড়ালেখা ও পরে চাকরি করার ইচ্ছা মেনে নিতে পারছিল না। সে কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। ছয় মাস আগেও তাঁকে ঘরে আটকে রেখে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে মোস্তাকের সাথে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। বাবা সিদ্দিকুর ছিলেন একজন সনামধন্য ইসলামি বক্তা। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন মেয়ে সুমাইয়া। ভর্তির তিন বছরের মাথায় বাবার পছন্দের ছেলে মোস্তাককে বিয়ে করেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন পড়ালেখায় বাদ সাধে। পড়াশোনার বদলে গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ দিতে থাকে। পড়ালেখার খরচ বাবা সিদ্দিকুরই দিয়ে আসছিলেন। তাই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়নি সুমাইয়াকে। প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি। ঢাকায় থেকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
হঠাৎই গত সেপ্টেম্বর মাসে বাবা সিদ্দিকুর মারা যান। এতে আর্থিক সংকটে পড়ে যান সুমাইয়া। শ্বশুরবাড়ি থেকে সহযোগিতার পরিবর্তে চাকরির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পুরোপুরি সংসারী হওয়ার নির্দেশ আসতে শুরু হয়। তবু সবকিছু ভুলে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েই ডুবে ছিলেন সুমাইয়া। তবে শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়েছে।
পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, গত রবিবার রাতে সুমাইয়াকে তাঁর স্বামীর ঘরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে মা নুজহাত বেগম যখন নাটোর সদর হাসপাতালে পৌঁছায়, তখন সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক, শ্বশুর জাকির বা ওই পরিবারের কাউকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। স্বামীসহ শ্বশুরকুলের সবাই গা-ঢাকা দিয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষ করে রাতে নাটোরের একটি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম আজ (মঙ্গলবার) সকালে জানান, গতকাল রাতে নিহত নারীর মা নুজহাত বেগম থানায় মামলা করেন। এতে সুমাইয়ার স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলা গ্রহণের পর আসামিদের ধরতে সারা রাত অভিযান চালায় পুলিশ। এরমধ্যে সুমাইয়ার ননদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়।
আনন্দবাজার/তা.তা