ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা থেকে পরিবারকে বাঁচাতে তিন মাস মর্গেই বসবাস

পরিবারকে করোনা থেকে বাঁচাতে তিন মাস ধরে মর্গেই বসবাস করছেন মর্গের সহকারী সিকান্দার আলি। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সহকারী। কর্মস্থল থেকে বাসার দূরত্ব দেড় শ’ গজের মত হলেও পরিবারের সুরক্ষার জন্য তার এই আত্মত্যাগ।

সিকান্দার আলি বলেন, মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে ছোট নাতি-নাতনিদের দেখতে। কিন্তু, আমার কারণে আমার পরিবারের লোকেরা যদি আক্রান্ত হয়, এই ভেবে আর যাওয়া হয় না।

মরদেহের উৎকট গন্ধ উপেক্ষা করে মর্গের একটি কক্ষেই তিন মাস ধরে থাকছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মরদেহগুলো তাকেই পরীক্ষা করতে হয়। মৃতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। যে কারণে তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

এদিকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় তাদের যে সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। একবার ব্যবহারের পর সেগুলোই আবার ধুয়ে শুকিয়ে পরতে হয়। এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায় বলে মনে করছেন সিকান্দার আলি এবং তার সহকর্মীরা।

সিকান্দার বলেন, আমার স্ত্রীর হৃদরোগ আছে। সাত বছর আগে সার্জারি করে ভালভ লাগানো হয়। চারটা ছোট বাচ্চা আছে বাসায়।

ঢামেকে ঢোকার মুখে উলটো দিকেই নতুন ভবনটার পাশে তার বাসায় স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে আর চার নাতি মিলে বসবাস করে। তিনি বলেন, যখনই তাদের সঙ্গে কথা হয়, নাতিরা জিজ্ঞাসা করে, আমি বাসায় যাই না কেন?

সিকান্দার ফোন করে খাবারের কথা জানালে পরিবারের কেউ একজন খাবার প্যাকেট করে দরজার পাশে রেখে দেয়। তার ঠিক করা একজন ওই প্যাকেট বাসা থেকে নিয়ে আসে। সিকান্দার বলেন, আমি নিজেই গিয়ে দরজার পাশে রাখা খাবার নিয়ে আসতে পারি। কিন্তু, নাতি-নাতনিরা যদি আমাকে দেখে ফেলে, তাহলে অবশ্যই আমার কাছে ছুটে চলে আসবে। তখন তো আমি তাদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারব না।

১৮ বছর বয়স থেকেই মর্গে সহকারী হিসেবে চাকরি করছেন সিকান্দার। এই দীর্ঘ সময়ে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের জন্য হাজারো মরদেহের ময়নাতদন্তে সহায়তা করেছেন। ঢামেকের মর্গে বসে বসে এখন দিন গুনছেন, কবে আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারবেন।

আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস

সংবাদটি শেয়ার করুন