শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আষাঢ় এসেছে বলে

টুটুল দেবনাথ

দুপুরে হঠাৎ ক্যালেন্ডার দেখতে গিয়েই খেয়াল করলাম আষাঢ় এসেছে। মানে বর্ষ, বাংলার দ্বিতীয় ঋতু। আর বর্ষা মানেই আমার প্রিয় কদমফুল!

কদমফুলকে কিন্তু বর্ষার শুভেচ্ছা দূত কিংবা এই ঋতুর প্রতীকীও বলা হয়, জানো তো?

কদমফুল কেন এত পছন্দ তার ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। তবে ছোট্ট একটা লজিক দাঁড় করাতে পারি! ছোটবেলায় হলুদ খুব পছন্দের রঙ ছিল। এটাও একটা ব্যাকরণ পছন্দ বলা যায়! বড় হবার সাথে সাথে রঙটাও বদলালো সাথে বচনটাও।

বড় হবার পরে হুমায়ুন আহমেদের গল্পে দেখি সে হলুদ রঙ দিয়ে একটা বিশেষ অনুভূতি প্রকাশের চেষ্টা করেছেন। যদিও হলুদ বাঙালির উৎসবের একটা রঙ। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের গল্পে ছিল এটা একটা বোবা অনুভূতির প্রতীকী রঙ। যে অনুভূতিটা রাখতে হয় অতি গোপনে, এটা দেখানো কিংবা বোঝানোতে আছে নিষিদ্ধ বারণ! তাই তো সে হিমুকে হলুদ পাঞ্জাবী পরিয়ে রাখতো! ছোটবেলা থেকেই কী এই অনুভূতিটার জন্যই এই রঙটাকে ভাল লাগা কীনা সেটা আমার আজও অজানা!

এবার আসি কদমফুলে। এই হলুদ রঙটার কারণেই হয়তোবা এই ফুলের প্রতি ভালো লাগা। তবে এই ফুলটা আর তার নামের সাথে আমার একটা ব্যাপারে চমৎকার এক সাদৃশ্য আছে।
কি ভাবছো যে ফুলের সাথে মৌমাছি/ভ্রমরের সংযোগ আছে মানুষের না, তাইতো?

তেমন কিছুই না কাকতালীয়ভাবে একটা জিনিস খুঁজে পেলাম যেখানে আমিও বিস্মিত! আচ্ছা শব্দের ‌’অপচয়’ না করে মূল প্রসঙ্গে আসি। তুমি আবার আমাকে ‘অপচয়’ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছিলে, পরে আবার বলবে, গাধাকে কোন কিছু বলেই লাভ নেই!

আরও পড়ুনঃ  পাইকগাছায় যুব দিবসে গাছের চারা বিতরণ

যাই হোক, কদম শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘কদম্ব’ থেকে এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে ‘যা বিরহীকে দু:খী করে’।
কি অবাক হচ্ছো?

এখানেই শেষ নয়! আরো ফ্যাক্ট আছে, মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্য জুড়ে রয়েছে কদমের সুরভী মাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহ গাঁথা। এমনকি ভগবত গীতাতেও নাকি এই ফুলের ব্যাপারে উল্লেখ করা আছে!

আর রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের উপাখ্যান তো তোমার জানাই আছে। আমাদের এই সমাজে যেটাকে আমরা নিষিদ্ধ কিংবা অবৈধ বলে জানি। যে প্রেম স্বয়ং ঈশ্বরের কাছে পবিত্র সেটা এই কলিযুগে আমাদের কাছে নিষিদ্ধ! অথচ এই কলিযুগের অবতার হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ!

এই হচ্ছে আমাদের কুসংস্কারাপন্ন সামাজিক অবক্ষয়ের নিয়মে আবদ্ধ, আমাদের সৃষ্টি! যেখানে সন্তানের সুখ থেকে পচনশীল সামাজিকতা আগে!

উহু! আরো কিছু সময় নিব তোমার। জানি এটা বলার অধিকার রাখি না তারপরেও লিখে রাখছি। চাইলেই তুমি নিমিষেই টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলা কাগজের মত করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে একেবারেই ডিলিট করে দিতে পারো।

বর্ষণ মানেই বর্ষাকাল। যদিও এই বৃষ্টি থেকে থেকে ঝরছে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকেই তারপরেও এই বর্ষণের একান্ত ব্যক্তিগত মাস হলো আষাঢ় আর শ্রাবণ।

তৃষ্ণার্ত প্রকৃতি অধীর আগ্রহে বসে থাকে এই মাসের জন্য। প্রাণভরে বৃক্ষরাজি তৃষ্ণা মিটিয়ে নেয় এই ঋতুতেই। অথচ তোমার সেই কথিত ‘টাকার অপর পিঠ’ এর খবর তোমার পৃথিবীর সুখী মানুষগুলো কেউ দেখে না। অনেকটা পাহাড়ের বুকে থেকে গড়িয়ে পরা সেই জলের মতন।

সুখী মানুষদের চোখে এটা ঝর্ণা আর কারো চোখে পাহাড়ের কান্না! প্রকৃতি যখন আনন্দে উত্তাল তখন ছিন্নমূল মানুষেরা প্রবল খরস্রোতে হারিয়ে ফেলে সদ্য গোছানো জীবনের তাল!
এই উপলব্ধি থেকেই হয়তোবা কেউ একজন লিখেছিলেন, ‘পূর্বে আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়
সেই বৎসর বন্যা হয়!

আরও পড়ুনঃ  ওয়াসার পানির বাড়তি দাম আদায়ে বাধা নেই

তোমার এই সুখী পৃথিবীর মানুষেরা আবার এই বর্ষায় কদমফুলে প্রেম খুঁজে পায়। কিন্তু তারা কেউই এই বাদল দিনের কদম ফুলের দু:খকে অনুভব করতে পারে না। তারা বর্ষাকে স্বাগত জানিয়ে কদমফুলকে নিবেদন করে গান গেয়ে আহ্বান করে গেছেন, ‘এসো নীপবনে ছায়াবিথীর তলে’।

অথচ এই কদম্ব, বিরহী দু:খের জলই যে এই বর্ষা সেটা কেবল ঈশ্বরই জানেন। তাই তো তিনি বর্ষাতেই কদম ফুলকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কারণ তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন, কষ্টের সাথে জলের যে একটা নিবিড় সম্পর্ক। যেটা গোপনীয় কিন্তু অবিচ্ছেদ্য!

তাই এই বর্ষার নিমন্ত্রণে শুধু প্রকৃতিই ভিজে না কখনো কখনো কারো কারো চোখ বেয়ে অন্তরটাও ভিজিয়ে দিয়ে যায়, অতি গোপনে! এই বর্ষার বাতাসে মেঘের গন্ধ থেকে কষ্টের গন্ধটাকে আলাদা করে শুঁকে নিতে পারে বারান্দায় আকাশপানে তাকিয়ে কারো ফিরে আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই মানুষটার নাক!

বর্ষার প্রথম আষাঢ় দিনের শুভেচ্ছা। তৃষ্ণায় কাতর বৃক্ষরাজির মত এই বর্ষার অঝোর ঝর্ণায় তোমার সুখের হৃদপিন্ডে আবার নতুন করে ফিরে আসুক প্রাণের স্পন্দন!

আর আমি? থাকলাম না হয় আষাঢ়ে গল্পের মত কোন এক অবিশ্বাসের অপেক্ষায়…

সংবাদটি শেয়ার করুন