ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নরসিংদীর আশার আলো ‘কুইক রেসপন্স টিম’ এবং এসিল্যান্ড শাহ আলম

পঁয়তাল্লিশোর্ধ্ব বলরাম দাস মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে। তার করোনা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করা না গেলেও মৃত্যুর পর তার ধারে কাছেও আসেননি কোনও আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী। এমনকি নিকটাত্মীয়রাও ভয়ে পালিয়ে গেছেন। ‘কুইক রেসপন্স টিমে’র কাছে খবর আসে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বলরাম দাস। তার সৎকারের কোনও লোক নেই, এমনকি নিকটাত্মীয়রাও তার সৎকারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

কথাগুলো বলছিলেন দুর্যোগকালীন ‘কুইক রেসপন্স টিমে’র আহ্বায়ক নরসিংদী সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহ আলম মিয়া। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় বলরাম দাসের করুন পরিস্থিতির কথা জানাচ্ছিলেন শাহ আলম।

এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন ম্যাজিস্ট্রেট শাহ আলম মিয়া। জেলা পুলিশের দুই সদস্য, দুই জন স্থানীয় সাংবাদিক, একজন প্রতিবেশীর উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নরসিংদীর মেঘনা নদীর দক্ষিণ তীরের শ্মশান ঘাটে বলরামের মরদেহ সৎকারের প্রস্তুতি নেন তিনি। বলরামের এক নিকট আত্মীয় মুখাগ্নির করেই সেখান থেকে বিদায় নেন। রাত ২টা ৪৯ মিনিটে দাহ শেষ করে ঘরে ফেরেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ আলম মিয়া।

করোনা উপসর্গ নিয়ে অথবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও অনেকে মারা গেছেন। এমন ভাবে মারা যাওয়া কোন ব্যক্তির সৎকারে কেউ এগিয়ে না আসলেও ম্যাজিস্ট্রেট শাহ আলম মিয়া খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে যান। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়ে ব্যবস্থা করেন সৎকারের।

নরসিংদীতে মঙ্গলবার (২৬ মে) পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ১০ জন। এদের মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান বলরাম দাস। মারা যাওয়া নীখিল দাস, আলহাজ শরিফ হোসেন মুক্তার, শংকর সাহা ও সাইমুম আক্তার করোনা পজিটিভ ছিলেন। এছাড় মৃত সুধীর সাহা, অনীল কুমার সাহা, দীলিপ কুমার ও শাহেরা বেগমের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

নিজের ফেসবুক ওয়ালে শাহ আলম মিয়া লিখেছেন, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি কোনও অপরাধী নন, তিনি একটি দুর্যোগ পরিস্থিতির শিকার মাত্র। তার প্রতি ভালোবাসা, মানবতা ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করুন।

নরসিংদী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ‘কুইক রেসপন্স টিম’ শুধু যে সৎকারের কাজই করে তা নয়। ত্রাণ বিতরণ, সামাজিক সংগঠনগুলোকে মানুষের সহযোগিতায় নিয়ে আসা, অসহায় মানুষের বাসায় খাবার ও ইফতার পৌঁছে দেওয়ার কাজগুলো করে চলেছে ‘কুইক রেসপন্স টিম’। এছাড়া, হোম আইসোলেশন ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সহযোগিতার জন্য প্রতিবেশীদের অনুরোধ করার কাজও চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ আলম মিয়া বলেন, রোজার সময় এবং ঈদের দিন অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ ও খাবার পৌঁছানো থেকে শুরু করে রোগীদের চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সসহ দ্রুত অন্যান্য ব্যবস্থা করা, হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের খোঁজ-খবর নেওয়া, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তার কাজ করছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ছাড়াও করোনায় মারা যাওয়া মানুষের বাসায় ত্রাণ পৌঁছনোসহ সকল কাজ করছি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে।

নরসিংদী জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ইনডিপেনডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা বলেন, ভয়াবহ এই করোনা দুর্যোগের সময় এ জেলায় যে কজন প্রাণের মায়া না করে মানুষের জন্য কাজ করছেন, এসিল্যান্ড শাহ আলম তাদের মধ্যে অন্যতম। ঘরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে রেখে দিনরাত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা দুর্যোগে তিনি মানুষের কল্যানে আমাকেও নিয়োজিত করেছেন।

আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস

সংবাদটি শেয়ার করুন