মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া দেশের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের এই চিরহরিৎ বনে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম। কিন্তু খাদ্যের অপ্রতুলতাসহ নানাবিধ সমস্যায় বিপর্যয়ের মুখে এখানকার বন্যপ্রাণীদের জীবনচক্র। বনের ভেতরে নির্মাণ করা সড়ক ও রেলপথে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী চা বাগানের ৭নং সেকশনের লেবু বাগান থেকে একটি তিন বছর বয়সী পুরুষ উল্লুক উদ্ধার করেন মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের রেঞ্জকর্মকর্তা মোনায়েম হোসেনের নেতৃত্বে বন বিভাগের সদস্যরা। পরে সন্ধ্যার দিকে এটিকে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম আবদুল ওয়াদুদের নির্দেশে শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজলের কাছে সেবা-শুশ্রুষার জন্য হস্তান্তর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী চঞ্চল গোয়ালা জানান, লাউয়াছড়ার পার্শ্ববর্তী চা বাগানের একটি কালো রঙের উল্লুক অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকার খবর পাই। পরে উল্লুকটিকে মাটিতে দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছে এর কিছু একটা হয়েছে। পরে আমি রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বলেন, উল্লুকটিকে তাড়াতাড়ি ধরে পাশের বাগমারা বিট অফিসে নিয়ে যেতে।
মোনায়েম হোসেন বলেন, উল্লুকটি সম্ভবত ডাল ভেঙে নিচে পড়ে অসুস্থ হয়ে গেছে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে চা বাগানের ভেতর ঢুকে পড়ে। আর উঠতে পারেনি গাছে।
বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বলেন, এই অসুস্থ উল্লুকটিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন কিছুটা সুস্থ। তবে কোমড়টাতে বেশি আহত হয়েছে, কোমড় তুলতে পারছে না। রাতে তার মাথায় যখম ছিল, রক্ত বের হচ্ছিল। এখন রক্ত পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। নরম খাবার খাচ্ছে। সে শক্ত খাবার আপেল এখনো খেতে পারছে না, তবে কলা, আঙ্গুর খাচ্ছে। কলার ভেতর ঔষুধ দিয়ে তাকে খাওয়ানো হচ্ছে।
উল্লুক গোলাকার দেহের লেজবিহীন মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। পুরুষের দেহ কালো এবং চোখের উপর মোটা সাদা ভ্রু। স্ত্রীর দেহ হলদে-ধূসর। তারও চোখের ভ্রু সাদাটে। তাদের হাত পায়ের তুলনায় দীর্ঘ। ইংরেজি নাম Hoolok Gibbon এবং বৈজ্ঞানিক নাম Hoolock hoolock। এরা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ‘বনমানুষ’ (APC)।
আনন্দবাজার/শাহী