চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চৌমুহনী-রানীরহাট ডিসি সড়কের দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের আবদুল গণী চৌধুরী সড়কের ডালাইখালের ওপর নির্মিত জরাজীর্ণ সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে বাঁশের খুঁটির ওপর ভর করে। যেকোনো সময় ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিছিন্ন হয়ে যেতে পারে দক্ষিণ রাজানগরের বৃহৎ অংশের সাথে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
জানা যায়, উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়ার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র ধামাইরহাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের আবদুল গণী চৌধুরী সড়কের ডালাইখাল। ১৯৬০ সালে ডালাইখালের ওপর নির্মিত হয় সেতুটি যা উপজেলার সাথে সোনারগাঁও, আফজালের পাড়া ও সাদেকের পাড়ার একমাত্র সংযোগ সেতু। সেতুটি অনেকটা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত। ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি সেতুর পিলারের নীচ থেকে মাটি সরে গিয়ে মাঝের অংশ ধসে যায়। এলাকাবাসী মাটি ভরাট ও ধসে যাওয়া অংশে কংক্রিট সিমেন্ট দিয়ে যোগাযোগের উপযোগী করে তুলে।
এ অবস্থায় ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আবারো একটি অংশ ধসে পড়ে। ফলে এখন ঝুঁকির মধ্যদিয়ে চলাচল করছে ছোট-বড় হরেক রকম যানবাহন। বর্তমানে কোন মোটর সাইকেল বা সিএনজি সেতুর ওপর উঠলে দুলতে থাকে সেতুটি। এতে যাত্রী সাধারণের মনে ভীতির সঞ্চার হয়। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অথচ এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন পণ্য ও যাত্রীবাহী বিভিন্ন যানবাহনসহ সোনারগাঁও, সাদেকের পাড় ও আফজলের পাড়া গ্রামের ৫ হাজার মানুষ চলাচল করেন। এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি না থাকায় এলাকাবাসী এ বিষয়ে নানা প্রশ্নও তুলছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাকিস্তান আমলে নির্মিত সেতুটি ভাঙ্গা পিলার আর বাঁশের খুটির ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর উভয় পাশের গার্ডারে বেশ কয়েকটি মারাত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে। দুই পাশের রেলিংগুলো একেবারেই ভেঙে গেছে। স্লোবের নীচের অংশের প্লাস্টার খসে পড়ে গেছে শুধু রডগুলো কোনোমতে ঝুলে আছে। হালকা-ভারি কোনো যান উঠলেই সেতুটি কাঁপতে থাকে। বর্তমানে সেতুর নিচে বাঁশের ঠিকা (ঠ্যাস) দিয়ে রাখা হয়েছে। শীঘ্রই সেতুটি পুনর্নির্মাণ জরুরি।
খবর প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেতুটি সংস্কারের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করলে যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা, মুহুর্তেই ঝঁড়ে যেতে পারে তাঁজা প্রাণ। সেই সাথে ইউনিয়নের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সাথে উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
আরও দেখা গেছে, মরণফাঁদে পরিণত হওয়া সেতুটির ওপর দিয়ে প্রতিনিয়তই চলছে মালবাহী নসিমন -করিমন, সিএনজি, লেগুনাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।
আফজলের পাড়ার মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। নানা প্রয়োজনে উপজেলা, হাসপাতাল ও ধামাইরহাট বাজার সেতু দিয়ে চলাচল করতে হয়, কিন্তু সেতু দিয়ে চলাচল করতে ভয় লাগে। এ ছাড়া ডালাই সেতুর রেলিং না থাকায় ছোট ছোট শিশু ও শিক্ষার্থীরাও স্কুলে যেতে ভয় পায়।’
দ: রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান আহমদ সৈয়দ তালুকদার বলেন, সেতুটির বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে লিখিত আবেদনসহ ছবি পাঠালেও কোনো কাজ হয়নি। সম্প্রতি বিষয়টি স্থানীয় সংসদ ও তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আনলে, তিনি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে সেতুটি নির্মাণের নির্দেশ দেন। এরপরও
আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যথাসাধ্য আলোচনা করে যাচ্ছি, যাতে এ সেতুটি দ্রুত নির্মাণ করা হয়।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রকৌশলী দিদারুল আলম বলেন, ‘দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ডালাইখাল সেতুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির নিচে বাঁশের ঠিকা দিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের ব্রিজ রিপ্লেসমেন্ট যেই প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্প ছাড়াও অন্য প্রকল্প থেকেও আমরা ব্রিজটি করার চেষ্টা করছি। শীঘ্রই নতুন সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান ও মূল্যায়নের কাজ শেষে সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’
আনন্দবাজার/শাহী