প্রকৃতির বিচার বলে একটা কথা রয়েছে। অনেকেই বলছেন গোটা বিশ্বের মানুষকে প্রকৃতি এখন তাঁর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। কিছু দিন আগেই যে মানুষ বহু প্রাণীর আশ্রয় ধ্বংস করে প্রকৃতিকে কোণঠাসা করেছে – তারাই এখন অসহায়, নিরুপায় হয়ে ঘরে বন্দি। প্রকৃতিকে যখন মানুষ কোন অবস্থাতেই নিস্তার দিচ্ছিলনা, ঠিক তখনি নিজেকে আবার গোছানোর জন্য নিজেই হয়তো এমন ব্যবস্থা নিয়েছে।
আসুন একটু হিসেব মিলিয়ে নেই। কয়েকদিনের ব্যবধানেই করোনা পাল্টে দিয়েছে সবকিছু। জনজীবন থমকে গেলেও কমেছে দূষণ। প্রাণ ফিরে পেয়েছে নদী, বন আর পাহাড়।
দেশে দেশে চলছে লকডাউন, জরুরি অবস্থা, কারফিউ। জনবহুল এলাকাগুলো ফাঁকা, যান চলাচল বন্ধ আর জনশূন্য জনপ্রিয় সব পর্যটনকেন্দ্র। মহামারি করোনার আতঙ্কে মানুষ যখন ঘরে বন্দি আর সেই সুযোগে প্রকৃতি নিজেকে যেমন গুছিয়ে নিচ্ছে তেমনি ফিরে পাচ্ছে প্রাণ।
কয়েক মাস আগেও ধুলোয় ধুসর ছিল ঢাকা, দিল্লি আর বেইজিংসহ বহু বড় শহরের আকাশ। মারাত্মক বায়ু দূষণে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের।
কলকারাখানাগুলো বন্ধ থাকায় বাতাসে ধূলিকণাসহ বিষাক্ত সব পদার্থের উপস্থিতি কমেছে। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতেও ধরা পড়েছে এ পার্থক্য। চীন একাই ২০ শতাংশ কম গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করছে। কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্কেও চলতি সপ্তাহে কার্বন নিঃসরণ কমেছে ১০ শতাংশ।
প্রায় ৩০ বছর পর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলেছে এক দল ডলফিনের। এরইমধ্যে স্বচ্ছ হয়েছে ভেনিসের খালগুলো, ফিরে এসেছে মাছ। ইতালির উপকূলে ফিরেছে ডলফিন। পর্যটকের ভিড় না থাকায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাদা বক আর পাতি হাঁস। করোনার প্রভাবে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় দলে দলে কচ্ছপ এসে ওড়িশা সমুদ্র সৈকতে ডিম পেরে যাচ্ছে ।
হয়তো প্রকৃতি সদয় হবে। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে। কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এখনই সচেতন না হলে মানবজাতিকে আরও চড়া মাসুল দিতে হবে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সহাবস্থান না করে আগ্রাসন চালালে মানুষও যে টিকতে পারবে না সেই বার্তাই যেন করোনার মধ্য দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি।
আনন্দবাজার/ শহক