সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ কর্মসূচি বা ‘বাংলা ব্লকেড’ চলছে রাজধানীতে। এই কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন আজ। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ৮টি মোড় ব্লক করেছে আন্দোলনকারী। এতে অন্তত ৫০টি রাস্তায় শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে।
সোমবার (০৮ জুলাই) কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শাহবাগ ও সায়েন্সল্যাব ব্লক করেন। পরে একে একে ফার্মগেট মোড়, কাওরান বাজার সার্ক ফোয়ারা মোড়, বাংলামোটর, মৎস ভবন মোড়, গুলিস্তান মোড়, চানখারপুল ও নীলক্ষেত মোড় ব্লক করা হয়। হাতে হাত ধরে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে এবং রাস্তার ওপর বসে আন্দোলন করছেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষার্থীরা।
এদিন ব্লক করা রাস্তাগুলোতে কোনও যানবাহন ঢুকতে বা বের হতে পারছে না। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ অর্ধশতাধিক রাস্তায় শত শত যানবাহন আটকা পরেছে। দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী, শিশু, বয়স্ক, অসুস্থ মানুষ। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, ফার্মগেট সংযুক্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পান্থপথ, মিরপুর রোড়, পুরান ঢাকা, মগবাজারের বিভিন্ন রাস্তা যানবাহন আটকে আছে। যানজট লেগে গেছে এসব এলাকার প্রধান সড়ক লাগোয়া বিভিন্ন গলিতেও। এদিকে পান্থপথ এলাকায় দেখা যায় পান্থপথ, গ্রিনরোড়, হাতিরপুলসহ আশপাশের সব সড়ক বন্ধ। রিকশা, প্রাইভেটকারসহ শত শত গাড়ি আটকা পড়ে আছে। পান্থপথ মোড়ে জাকারিয়া নামে এক চাকরিজীবী বলেন, গতকালের মতো আজও সড়কে ব্লক করায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এভাবে কি চলতে পারে? তাদের আন্দোলন যৌক্তিক। তবে আমাদের দুর্ভোগে ফেলে। আমাদের অফিস তো বন্ধ না! প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ কোটা সংস্কারের আন্দোলনে রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। একটি জাতির ভবিষ্যৎ এই আন্দোলনের ওপর নির্ভর করছে দাবি করে ফার্মগেট মোড়ে অবস্থানরত ঢাবি বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আন্দোলন আরও উজ্জীবিত হবে। একটি জাতির ভবিষ্যতের স্বার্থে এ আন্দোলন। একে একে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে। ঢাবির ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন বিল্লাহ বলেন, কোটা বৈষম্য আমাদের জাতিগতভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে। সংবিধানের আলোকে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কোটার মাধ্যমে তুলে আনা। অথচ কোটায় আমাদের জাতিগতভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে। কোটার বাইরে কোটি কোটি মানুষের ভবিষ্যতে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া এসব মানুষকে সারাজীবন কষ্ট যাতে না করতে হয় সেজন্য সাময়িক কষ্ট তো করতে হবে। আমরা সড়ক বন্ধ করলেও অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী গাড়িগুলো চলাচলে সহযোগিতা করছি। তিতুমীর কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী ফাহিমুর রহমান বলেন, আমরা কাওরান বাজার ও ফার্মগেট ব্লক করার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। যত বাধা আসুক আমাদের দাবি না মেনে আন্দোলন থামানো যাবে না। যেকোনও আন্দোলনে জনদুর্ভোগ থাকে। আমাদের জন্যই আমাদের এসব মেনে নিতে হবে। আমরা বৈষম্য দূর করে মেধার ভিত্তিতে চাকরি চাই। রাষ্ট্রের সবাই সমান অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমেছি।
কোটা আন্দোলনের প্রভাবে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি আটকে পড়া যানবাহনগুলোকে বিকল্প রাস্তা দিয়ে বাইপাস করে দেওয়ার। যানজট ও বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আমাদের ঊর্ধ্বতন স্যাররা রাস্তায় আছেন। পুরো পরিস্থিতি তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রস্ততি রেখেছি। এছাড়াও সড়কের শৃঙ্খলা বজার রাখতে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।