শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শতাংশ ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার: গবেষণা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শতাংশ ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার গবেষণা

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে ৭৬ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ শতাংশ এবং মেডিকেল কলেজে ৫৪ শতাংশ ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন।

রোববার (২৪ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা: বর্তমান অবস্থা ও বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য তাহমিনা রহমান।

তবে গবেষণাটি ২০২১ সালে করা হয়েছে বলে জানান তাহমিনা রহমান। আর বর্তমানে এই সংখ্যার তেমন হেরফের হয়নি বলেও মতবিনিময় সভায় তুলে ধরেন তাহমিনা। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে তাহমিনা রহমান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সহপাঠী ও শিক্ষকদের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, হয়রানি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হচ্ছেন ৭৪ শতাংশ। তিনি আরও জানান, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫০ শতাংশের বেশি নারী অনলাইনে সহিংসতার শিকার হন।

জরিপে বলা হয়, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালত ১১ দফা নির্দেশনা দিলেও তার কার্যকরী বাস্তবায়ন নেই। ইউজিসি অনুমোদিত ১৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টি (৬১ শতাংশ) বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ কমিটি গঠন করেছে। যার মধ্যে সরকারি ৪০টি ও বেসরকারি ৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয়। ৬২টি (৩৯ শতাংশ) বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ কমিটি গঠন করেনি। গবেষণায় ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ কমিটি প্রসঙ্গে তথ্য দিয়েছে বলে জানান তাহমিনা। তাহমিনা বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নির্দেশে রেজিস্ট্রার তাঁদের পছন্দমতো সদস্য নির্বাচন করে অভিযোগ কমিটি গঠন করেন। এ বিষয়ে কাজের যোগ্যতা ও আগ্রহ বিবেচনা করা হয় না। অভিযোগ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে যৌন হয়রানি ও উচ্চ আদালতের ১১ দফা নির্দেশনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে বলে জানান তিনি। ৭৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানেননি বলে জানান তিনি। এছাড়া সভায় তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সচেতনতা করা, সুনির্দিষ্ট একটি আইন এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন; সিন্ডিকেট সভায় ক্ষমতাশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতি জোর দেন।

আরও পড়ুনঃ  বাতিঘরে আলোকিত প্রত্যন্তঅঞ্চল

আমরা সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোরও দায় আছে। কমিটিগুলোকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। তবে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আইনুনাহার সিদ্দিকা বলেন, ১৫ বছরেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে কমিটি করা যায়নি। এটা স্পষ্ট আদালত অবমাননা এবং আইনকে অবজ্ঞা করার শামিল। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতেই এত দিন কোনো কমিটি ছিল না।

উক্ত সভায় সভাপতির বক্তব্যে ব্লাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, অবন্তিকার ঘটনা একটা ব্রেকথ্রু। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিকভাবে প্ররোচিত নিয়োগের দৌরাত্ম্য হ্রাস করতে হবে। ডিসি, এসপিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানের ওপর তো আর কোনো আইন নেই। দলনিরপেক্ষ স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে যৌন হয়রানির বিষয়ে মোকাবিলা করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন