শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিবিয়ানায় খননে নয়, ভূমিকম্পে কাঁপে এলাকা: তদন্ত প্রতিবেদন

বিবিয়ানায় খননে নয়, ভূমিকম্পে কাঁপে এলাকা তদন্ত প্রতিবেদন

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় কাঁপুনি ও বাড়িঘরে ফাটল প্রাকৃতিক ভূমিকম্পের কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছে পেট্রোবাংলার তদন্ত কমিটি।

তবে স্থানীয়রা প্রতিবেদনটিকে পক্ষপাতমূলক বলে দাবি করেছেন। এতে আবারও আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিবিয়ানায় প্রাকৃতিক কারণে ভূমিকম্পের ঘটনাটি ঘটেছে। এখানে মানুষের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। বিবিয়ানা তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ ও ২৮ নম্বর কূপ খননের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ২৮ নম্বর কূপ খনন কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২৭ নম্বর কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। তিনি জানান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

এদিকে প্রতিবেদনের খবরে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি, নতুন কূপ খননকালে ভুল প্রক্রিয়ায় খনন করায় ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এতে বাড়িঘর ফেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতিপূরণ এড়াতে পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি। স্থানীয় কসবা গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল আহমদ বলেন, শুনেছি তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, এটা পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন। মূলত গ্যাসফিল্ডে ড্রিলিং কাজের জন্য কৃত্রিম ভূমিকম্প সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের বাড়িঘরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই। এছাড়া দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালিক মিয়া বলেন, পেট্রোবাংলার তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয় যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বিষয়টি সঠিক নয়। আমরা আলাপ-আলোচনা করে সম্মিলিতভাবে এর প্রতিবাদ করবো। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ শেভরন থেকে আদায় করতে সরকারের সহযোগিতা চাই।

আরও পড়ুনঃ  তুরস্ক-সিরিয়ার প্রাণহানি ৫০ হাজার ছাড়ালো

প্রসঙ্গত, নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের করিমপুরে অবস্থিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরনের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে এটি। গত ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) পর্যন্ত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩-৪ বার বিকট শব্দ ও অতিরিক্ত কাঁপুনি হয়। এতে মাটি কেঁপে ফাটল ধরেছে ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের ২০ গ্রামের দুই শতাধিক ঘর বাড়িতে। বিষয়টি একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানালেও ব্যবস্থা নেয়নি। যেকোনও মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় দিন কাটছে স্থানীয়দের। এ ঘটনার পর থেকে শিশু থেকে বৃদ্ধ লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র ঘেরাও করে। এ সময় বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়াকে জানান। পরে সংসদ সদস্য মোবাইল ফোনে বিষয়টি সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানালে সরে যান স্থানীয়রা।

এছাড়া অতিরিক্ত কাঁপুনি দিলে আতঙ্ক ছড়ায় স্থানীয়দের মাঝে, পরে ৪ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) আন্দোলনে নামেন তারা। স্থানীয়রা বিবিয়ানার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ, সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ার ঘটনায় শেভরনের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন। আন্দোলনের মুখে ওই দিন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন বিভাগ সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্যরা হলেন- সদস্য সচিব বাংলাদেশ তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন ডেভেলপমেন্ট ও প্রোডাকশনের মহা-ব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন, সদস্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন