শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের সন্তানকে হত্যা করলো মা-চাচা

পটুয়াখালীর দশমিনায় জমিজমা নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের শিশু সন্তানকে মা রিনা বেগম ও চাচা সেন্টু মিলে হত্যা করা হয়েছে।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১টায় উপজেলায় ওই শিশুকে হত্যার স্থানে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, মরিয়মকে হত্যার আলামত ঢাকতে মা রিনা বেগম রক্তাক্ত পোশাক নিয়ে পুকুরে নেমে সাঁতার জানা মরিয়মকে খুঁজতে থাকেন এবং মরিয়মের নিখোঁজ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি বাড়ি না খুঁজে এলাকার মসজিদের মাইকে তার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ প্রচার করতে থাকেন। এছাড়া মরিয়মের মায়ের অসংলগ্ন আচরণ দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। মরিয়মকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত লাঠি ও ওড়না উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মরিয়মের হত্যার পর দশমিনা থানা পুলিশ ও স্পেশাল পুলিশ পটুয়াখালী বিভিন্নভাবে হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ করেন। মরিয়মের চাচা সেন্টুকে পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যা করার কথা স্বীকার করে।

আদালতের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবারবন্দি দেন, মরিয়মের মায়ের সাথে আত্মীয়দের দীর্ঘদিন জমিজমা নিয়ে বিরোধ ও মামলা চলমান।

তাদের ফাঁসানোর জন্য অনেক দিন থেকে চাচা ও মা পরিকল্পনা করে আসছে। প্রথম পরিকল্পনা ছিল মেঝো মেয়েকে ধর্ষণ করাবে কিন্তু ধর্ষণ মামলা দিলে বিবাহ দিতে পরবে না তাই ওই পরিকল্পনা বাদ দেয়। দ্বিতীয় পরিকল্পনা ছোট মেয়ে মরিয়মকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাবে।

দ্বিতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ছোট মেয়ে মরিয়মকে হত্যার পরিকল্পনা করে মরিয়মের মা রিনা বেগম ও চাচা সেন্টু। ওই হত্যা বিরোধীয়দের উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য পরিকল্পানা মোতাবেক ওই দিন সন্ধ্যায় আলালের ঘর থেকে মরিয়ম বের হবার পর মা মাঝ পথ থেকে বাড়ির উত্তর পাশের নির্জন ভিটায় নিয়ে যায় সেখানে সেন্টু আগে থেকে উপস্থিত ছিল। মরিয়মকে নিয়ে যাবার পর সেন্টু প্রথমে লাঠিদিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং মরিয়ম চিৎকার করতে না পারে সে কারণে মা রিনা বেগম মুখের মধ্যে ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন।

আরও পড়ুনঃ  মসজিদের ওপর বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ লাইন  সুনামগঞ্জে          

সেন্টুর স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দি মূলে ওই লাঠি মঙ্গলবার উদ্ধার করা হয় এবং মরিয়মের মা রিনা বেগমকে আটক করা হয়। সেন্টুকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এবং মরিয়মকে যেখানে হত্যা করা হয়েছে সেখানে মরিয়মের মা রিনা বেগমকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনার বিবরণ জানা জন্য। মরিয়মের হত্যার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়ে ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দশমিনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) নুরুল ইসলাম মজুমদার, পটুয়াখালী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন, দশমিনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) অনুপ দাস, বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ঝন্টুসহ উপজেলা ও জেলা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা।

এর আগে শনিবার রামবল্লভ অগ্রণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়মকে (৮) বাড়িতে ফিরতে না দেখে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। রাত ৮টায় বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটায় মরিয়মের রক্তাক্ত দেহ পরে থাকতে দেখেন তার বাবা মকবুল মৃধা। এসময় শিশুটির মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল এবং গলায় ওড়না পেঁচানো মরদেহ উদ্ধার করে দশমিনা থানা পুলিশ।

পরে ৫ তারিখ সোমবার দশমিনা থানায় মরিয়কে হত্যার ঘটনায় শিশুটির বাবা মো. মকবুল হোসেন মৃধা বাদী হয়ে দশমিনা থানায় অজ্ঞাতনামা ৫ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন