শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউইয়র্কে ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটক ‘জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত

নিউইয়র্কে ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটক ‘জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত

আনুষ্ঠানিকভাবে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বিবেচনায় ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে ‘জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নিউইয়র্ক।

নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন বলে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) এসব তথ্য জানা যায়।

নানা আসক্তিমূলক ও বিপজ্জনক ফিচার দিয়ে টিকটক, ইউটিউব, ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর নকশা করা হয়েছে উল্লেখ করে নিউইয়র্কের মেয়র বলেন, এগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করছে। তামাক ও বন্দুকের ক্ষেত্রে যেমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন মার্কিন সার্জনরা, তেমনি আমরা অন্যান্য সামাজিক মিডিয়াকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির মতো বিবেচনা করছি এবং এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া, এদিন নিউইয়র্ক শহরের স্বাস্থ্য কমিশনার অশ্বিন ভাসান সামাজিক মাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করার সুপারিশ করেন। তিনি নিউইয়র্ক শহরের তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের রূপরেখা তুলে ধরেন এবং স্বাস্থ্যকর সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারে উৎসাহিত করার বিষয়ে নির্দেশনা দেন। এজন্য প্রযুক্তিবিহীন সময় কাটানো, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সময় ব্যবহারকারীর অনুভূতি পর্যবেক্ষণ করা ও প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করার নির্দেশ দেন তিনি।

এক জরিপ বলছে, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে, মজাদার বিষয় নিয়ে আলাপ করতে ও ট্রেন্ড অনুসরণ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ৯৫ শতাংশ কিশোর–কিশোরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। এজন্য তরুণেরা যে ধরনের গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে, তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া এসব মাধ্যম ব্যবহারের আসক্তিও বেড়েছে। শিশুদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ওপর অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে ও অনলাইনে কাটানো সময় বেঁধে দিতে টিকটক ও ইউটিউবসহ বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি কোম্পানি এর মধ্যে নতুন কিছু ফিচারও এনেছে।

আরও পড়ুনঃ  ভোটারদের দুইবার ভোট দেওয়া উচিত : ট্রাম্প

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে ‘শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ’, তার যথেষ্ট প্রমাণ নেই। মানসিক স্বাস্থ্যের এই সংকটের সময়ে আমরা সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবকে উপেক্ষা করতে পারি না। এটি লাখ লাখ পরিবার ও শিশুদের কষ্টের জন্য দায়ী, এমন তথ্য গত বছরের মে মাসে এক সুপারিশমালা জারি করে যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল বিবেক এইচ মুর্তি জানান।

বুধবার প্রকাশিত এই সুপারিশে বলা হয়, ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের হতাশা ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ও আত্মহত্যার ঘটনা ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কালো, ল্যাটিন, নারী বা এলজিবিটিকিউপ্লাসের মধ্যে এই হতাশার মাত্রা অনেক বেশি। সামাজিক মাধ্যমকে একেবারে নির্মূল না করে বরং এর সম্ভাব্য ঝুঁকি তুলে ধরে নিউইয়র্ক শহরের উপদেশমূলক বার্তা প্রকাশের বিষয়টিকে প্রশংসা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের অধ্যাপক ওফির টুরেল। তিনি প্রযুক্তির আচরণগত প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। সামাজিক মাধ্যমের সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে ‘বডি ইমেইজ, সামাজিক তুলনা, বিষণ্নতা ও আসক্তির মতো’ বিষয়গুলোকে উল্লেখ করেন টুরেল। এছাড়া তিনি একে তুলনা করেছেন ‘ফুড রেগুলেশন মডেল’ নামের এক পদ্ধতির সঙ্গে। এই মডেলে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করেই বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন