শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পানিবন্দি হাজারো পরিবার

আবারও ফুঁসছে ব্রহ্মপুত্র

আবারও ফুঁসছে ব্রহ্মপুত্র
  • বন্যা আর ভাঙনে মানুষের অবস্থা খারাপ। কিন্তু কোনও সহায়তা দিতে পারি নাই। খাদ্য সহায়তার জন্য বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি- আসাদুজ্জামান, চেয়ারম্যান, নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদ
  • ক্যামনে ভালো থাকি। এবার নিয়া এ মৌসুমে চারবার পানি উঠলো। ঘরের ভেতর কোমর সমান পানি। সাহায্য দরকার কিন্তু সবাই সাহায্য পাইতাছে না- মতিয়ার রহমান, মুসার চরের বাসিন্দা
  • পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি রেখেছি। খাদ্য সহায়তা বিতরণ চলছে- মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে সব নদনদীর পানি কমলেও ফুঁসছে ব্রহ্মপুত্র। টানা এক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়তে থাকায় এই নদের অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিন উপজেলার চার ইউনিয়নের হাজারেরও বেশি পরিবার। আরও দুই একদিন পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু হয়েছে।

পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টায় জেলার উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৬ ইঞ্চি থেকে এক ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেতে পারে । এসময় নদের পানি বিপদসীমায় পৌঁছে আবারও কমতে শুরু করবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার (৩১আগস্ট) বিকাল ৩ টা পর্যন্ত জেলার সব নদনদীর পানি কমতে থাকলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ সময় নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

আরও পড়ুনঃ  শ্রমিকদের প্রতারণা ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ: প্রধানমন্ত্রী

ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে সদরের যাত্রাপুর, উলিপুরের বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, হাতিয়া এবং চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলের আমন ক্ষেত ও কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার চরাঞ্চলের হাজারেরও বেশি পরিবারের ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েছে। বাসিন্দাদের রান্নার চুলা ও শৌচাগার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন এসব পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ। নারী, শিশু ও বয়স্ক সদস্যদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলো।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবার চরের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমগো অবস্থা খারাপ। ঘরে বাইরে পানি। পানি বাড়তেই আছে। ’

মুসার চরের বাসিন্দা মতিয়ার বলেন, ‘ এবার নিয়া মৌসুমে চারবার পানি উঠলো। ঘরের ভেতর কোমর সমান পানি। ক্যামনে ভালা থাকি। চরের সব পরিবারের ঘরে পানি। সাহায্য দরকার কিন্তু সবাই সাহায্য পাইতাছে না। ত্রাণ বিতরণ নিয়া অনিয়ম হইতাছে।’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আক্তার হোসেন জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির ফলে ইউনিয়নের ৬ টি ওয়ার্ডের অন্তত চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। এসব পরিবারের ঘরের ভেতর হাঁটু থেকে বুক সমান উচ্চতায় পানি। ইউনিয়নের ব্যাপারী পাড়া নতুন চর, মাঝিপাড়া, ফকিরের চর, পূর্ব বালাডোবা, উত্তর বালাডোবা, মুসার চর, মশালের চর সহ কয়েকটি গ্রামের হাজারো পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এসব পরিবারকে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আক্তার বলেন, ‘ ইউনিয়নের চারশত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে শুকনা খাবার বিতরণের প্রয়োজনীয়তা জানানো হয়েছে।’

আরও পড়ুনঃ  দূতাবাসে হাসিমুখে সেবা দিন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চিলমারীর নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর ইউনিয়নের কয়েকশত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের বাড়ির আঙ্গিনা ও ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার তিন ইউনিয়নের কয়েকশ’ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

নয়ারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান জানান, তার ইউনিয়নের হাতিয়া বকসি, কাজলডাঙা, গয়নার পটল, উত্তর খাউরিয়ার চর পশ্চিমপাড়া সহ ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি। এসব পরিবারের অনেকের জীবন ঘরের ভেতর চৌকিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এদের খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন হলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় একটি পরিবারকেও খাদ্য সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ইউনিয়নের অন্তত দেড়শ’ হেক্টর জমির ছিটা আমন ও কালাই খেত পানিতে তলিয়ে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
অসহায়ত্ব স্বীকার করে চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ বন্যা আর ভাঙনে মানুষের অবস্থা খারাপ। কিন্তু কোনও সহায়তা দিতে পারি নাই। খাদ্য সহায়তার জন্য বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমি নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান। কার কাছে আবদার করবো? ’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি রেখেছি। খাদ্য সহায়তা বিতরণ চলছে। যেসব এলাকায় এখনও সহায়তা পৌঁছায়নি সেসব এলাকায় আজকে (বৃহস্পতিবার) পৌঁছে যাবে। আমি সেভাবেই নির্দেশনা দিচ্ছি।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন