শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদী খননে ভেঙে পড়েছে স্লুইস গেট ও সেতু

নদী খননে ভেঙে পড়েছে স্লুইস গেট ও সেতু

নীলফামারীর ডিমলায় ভারত থেকে বয়ে আসা নাউতারা নদীর ওপর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছিল। বছরদুয়েক আগে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে নদীটি পুনঃখনন করা হয়। এ সময় উজানের ঢলে স্লুইস গেটসহ ওই নদীর ওপরে থাকা অন্তত ৫টি সেতু দেবে গিয়ে ভেঙে পড়েছে।এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।

এ অবস্থার জন্য তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিকে অভিযোগের তির ছুড়েছে। তবে বিষয়টি জানেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সেতু ও স্লুইস গেটের এ অবস্থার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও পাউবো পরস্পরের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলেছে।

পাউবো সুত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নাউতারা নদীর ২৫ কিলোমিটার এলাকা খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে পুনঃখনন করে।খননের একমাস যেতে না যেতেই বর্ষায় উজানের ঢলে নদীর ওপরে থাকা স্লুইস গেট ও সেতু দেবে যায়।

সরজমিনে জানা যায়, উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের মধ্যপাড়া এলাকায় বছর দশেক আগে নাউতারা নদীর উপর কৃষি ফসল বৃদ্ধিতে পানির সঠিক ব্যবহার এবং বন্যার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে প্রায় ৫০ মিটার একটি স্লুইস গেট নির্মাণ করে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড।

২০২১ সালের শেষের দিকে অপরিকল্পিতভাবে নদীটি খননের পরে নীচের অংশের মাটি সরে স্লুইস গেটটি প্রায় ৬ ফুট দেবে যায়। এতে গেট অকেজো হয়ে পড়ে।এ অবস্থায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে নদীর গতিপথ বদলে যায় । ফলে স্লুইচ গেটের দুই পাশের সংযোগ সড়কসহ ৫টি বসতবাড়ি ও মধ্যপাড়া সড়কটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ  করোনা রোধে পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার

স্থানীয়রা কৃষকরা বলেন, অপরিকল্পিত নদী খননের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেবে যাওয়া স্লুইস গেট এখন তাদের গলার কাঁটা। নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে তাদের কৃষি জমি ভাঙছে।ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে শতাধিক বসতবাড়ি ও রাস্তা।

এ ছাড়া এই স্লুইস গেটের দেখভালের দায়িত্ব কার সেটাও জানেন না তারা।দেবে যাওয়ার পর কেউ দেখতেও আসেননি। তাই এর কোনো সংস্কারও হয়নি।

নদী ভাঙ্গনের শিকার মধ্যপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, নদী খননের সময় স্লুইস গেট আর রাস্তার সর্বনাশ হয়েছে। গভীর করে নদী খনন করায় স্লুইস গেটটি দেবে যায়। এতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে বাঁধসহ আমাদের বসতভিটা ও ফসলিজমি নদীতে ধসে গেল।

ছাতনাই মিয়াপাড়া গ্রামে ২০১৬ সালের দিকে নির্মাণ করা হয় ২০ মিটার সেতু। নদী খননের পর পুরো সেতুটি ৫ ফুট দেবে ভেঙে পড়েছে । দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটিও সরে গেছে।

গ্রামের বাসিন্দা লালমিয়া বলেন,সেতুটি ভেঙে পড়ায় প্রায় ২ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে । এতে সময় এবং অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে। যানবাহন ঢুকতে না পারায় এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। কেউ অসুস্থ হলে ঘাড়ে চেপে নদী পার হতে হয়।

একই গ্রামে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি সেতু মাঝ বরাবর ৩ ফুট দেবে গেছে । এছাড়া ভেঙে পড়ার ক্ষন গুনছে ডিমলা-পূর্ব ছাতনাই মুল সড়কের সেতুসহ একাধিক সেতু।

নদীপাড়ের আলী আজগর, মফিজুল উদ্দিন, আবুল খায়েরসহ অন্তত ২০ বাসিন্দা বলেন,সেতুর খুটির গভীরতা বিবেচনায় না নিয়ে অতিরিক্ত গভীর করে নদী খনন করা হয়েছে। এছাড়া নদীর দুইপাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে অপরিকল্পিত বাঁধ দেওয়ায় সামন্য বৃষ্টিতে তাদের হাজারো একর ফসলি জমি জলাবদ্ধ হয়।

আরও পড়ুনঃ  ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, সেতুর পাইলিংয়ের চেয়ে নদী খননের গভীরতা বেশি হওয়ায় পিলারের নীচের মাটি সরে গেছে। ঝুঁকিপূর্ন সেতু দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল করছে।সেতু ভেঙে দুর্ঘটনায় আশঙ্কা করছেন তিনি।

জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ হাসান বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। বিষয়টি জেনে জানাবো।

নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন,আমি সদ্য যোগদান করেছি। তাই ভেঙে পড়া স্লুইস গেটের বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তবে অপরিকল্পিত নদীখননের অভিযোগটি অস্বীকার করে ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য পরিমাপ অনুযায়ীই নদী পুনঃখননের কাজ হয়েছে। সেতুগুলো তৈরি করা হয়েছে অনেক আগে। তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে পাউবোর সমন্বয়হীনতার কারনে নদীর পরিমাপ বিবেচনায় আনেনি। ফলে এই অবস্থা ঘটেছে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন