সিলেট মহানগরীতের গভীর রাতে কুরআন পুড়ানোর অভিযোগে আটককৃত দুজন প্রাথমিকভাবে পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম)। সোমবার সকাল সোয়া ১১টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে এবং পরিস্থিতি শান্ত করে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আটককৃত দুজন পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেছে।
এ ঘটনায় আটককৃত দুজন হলেন- সিলেট আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান নুরুর রহমান (৫০)। তিনি গোলাপগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের মৃত ফজুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে তিনি কোতোয়ালি থানাধীন তপোবন এলাকার সরু মিয়ার বাসায় বসবাস করেন। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানাধীন বাউলাপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে মাহবুব আলম (৪৫)।
রবিবার (৬ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আখালিয়ার ধানুপাড়াস্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়ানোর অভিযোগ তুলে তাদের দু’জনকে মারধর করেন স্থানীয় জনতা।
স্থানীয়রা জানান, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট আইডিয়াল স্কুলে অনেকগুলো কুরআন শরীফে আগুন ধরিয়ে দেন দুইজন ব্যক্তি। এসময় খবর পেয়ে উত্তেজিত জনতা তাদের আটক করে গণধোলাই দেন। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর ও থানা পুলিশ তাদের এক রুমে নিয়ে হেফাজতে রাখেন।
সময় যত বাড়তে থাকে পরিস্থিতি তত উত্তপ্ত হয়। রাত ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিশেষ টিম সিআরটি, জালালাবাদ ও কোতোয়ালি থানার অতিরিক্ত পুলিশ এবং র্যাব-৯ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
এসময় উত্তেজিনত জনতার একাংশ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
রাত সাড়ে ১২টার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধ্য হয়ে ফাঁকা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। পরে ধীরে ধীরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন উত্তেজিত স্থানীয় জনতা। রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সূত্র জানায়, ৬ আগস্ট রোববার বিকেলে নুরুল রহমানের কাছে জালালাবাদ থানাধীন ফতেহপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ইসহাক নামের এক ব্যক্তি কার্টুন ও বস্তা ভর্তি কোরআন শরীফ দিয়ে যান। কুরআন শরীফ দিয়ে কার্টুন রক্ষিত কোরআন শরীফ মানুষের মধ্যে বিলি করতে বলেন। একই সাথে বস্তায় রক্ষিত কুরআন শরীফ গুলো পুড়িয়ে ফেলতে বলেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ইসহাক সিলেট বেতারের ক্বারী ও সিলেট আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এর খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কথামতো রবিবার (৬ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে গ্রেফতারকৃত নুরুর রহমান সঙ্গীয় মাহবুবল আলমকে নিয়ে ৪৫টি কোরআন শরীফ পুড়ানোর সময় স্থানীয়রা দেখে ফেলেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত ফতেহপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ইসহাকসহ ঘটনায় অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
গ্রেফতারকৃত নুরুর রহমান ও মাহবুব আলম ছাত্র জীবনে শিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলো। নুরুর রহমান ছাত্র জীবনে ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন। তিনি বর্তমানে জৈন্তাপুর মাদ্রাসা সিলেটে ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক ও পাশাপাশি সিলেট আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী জানান, কুরআন শরীফ পুড়ানোর জন্য ঘটনাস্থল থেকে ২জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সাথে পুলিশ পুড়ানো কুরআন শরীফ উদ্ধার করেছে। সেই সাথে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ। তিনি জানান, পুলিশ অভিযান চালিয়ে কুরআন শরীফ পুড়ানোর ঘটনায় শিবিরের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এসময় উত্তেজিত জনতার হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
অনন্দবাজার/শহক