শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ফেনী জেনারেল হাসপাতাল

শয্যা পাওয়া যেন সোনার হরিণ

৫ বেডে চলছে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা কার্যক্রম
  • ৫ বেডে চলছে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা কার্যক্রম
  • একজন মারা গেলে অরেক জনের ভর্তির সুযোগ
  • শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর দাবি রোগীদের

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস করতে এবং নতুন রোগী ভর্তি করাতে পুরাতন রোগীর কাউকে না কাউকে মারা যেতে হয়। মাত্র ৫ টি বেডে চলচে চিকিৎসা কার্যক্রম।

তাই নতুন আবেদনকারী রোগীর জন্য ডায়ালাইসিস শয্যা পাওয়াটা অনেকটা সোনার হরিণ। ভর্তিকৃত কোনো রোগীর মৃত্যু হলে কিংবা অন্য কোনো হাসপাতালে স্থানান্তর হলেই কেবল শয্যা খালি হচ্ছে। ফলে নতুন আবেদনকারীদের সিরিয়াল পেতে অন্য রোগীর মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালে প্রায় পাঁচ শতাধিক আলোনে জমা পড়ে আছে।

এ অবস্থায় হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর দাবি রোগীদের। ফয়েজ আহম্মেদ নামে প্রবাসফেরত এক কিডনি রোগী জানান, গত চার বছর ধরে তাকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয়বহুল এ সেবা নিতে গিয়ে এখন অনেকটা নিঃস্ব তিনি। তাই সরকারি হাসপাতালে কম খরচে সেবা নিতে ফেনী সদর হাসপাতালে আবেদন করেন। কিন্তু মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও সুযোগ না পেয়ে এখন বেঁচে থাকার স্বপ্ন যেন

ফিকে হয়ে আসছে তার। নাম প্রকাশ না করে অপর এক সৌদিপ্রবাসী জানান, কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে সৌদির কোম্পানি তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। এখন সপ্তাহে দবার করে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। ঢাকায় থেকে বাসা ভাড়া থাকা খাওয়াসহ এ চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। নিজ জেলা ফেনীতে এসে আবেদন করে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছেন।

আরও পড়ুনঃ  চতুর্থশিল্প বিপ্লব-দক্ষতা নিয়ে আলোচনা

ফেনী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালের পুরনো ভবনের নিচতলায় স্থাপিত হয়েছে ১০ শয্যার একটি হেমোডায়ালাইসিস বিভাগ। অথবা মধ্যবিত্ত।” সেখানে প্রতিদিন ৩ শিফটে ১ জন। করে ২৭ রোগীকে ডায়ালাইসিস করার ব্যবস্থা রয়েছে কেযান্ত্রিক ত্রুটিসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রতি শিফটে ৭ জন করে ২১ জনকে ডায়ালাইসিস করা হয়। এ ছাড়া হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ও রোগীকে প্রতিদিন ডায়ালাইসিস করা হয়। প্রতিবার ডায়ালাইসিস করতে পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ ৪০০ টাকার মতো খরচ হয়। চিকিৎসক ছাড়াও নার্সসহ ১০ জন পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা চালু থাকলেও শয্যা সংখ্যা অপ্রতুল এবং অনেকটা ব্যয়বহুল। ফেনীতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিবার ডায়ালাইসিস করাতে খরচ পড়ে ২ হাজার পাঁচশত টাকা।

২৫০ শয়ার ফেনী জেনাে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা মো. আসিফ ইকবাল বলেন, “দেশে দিন দিন কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই সেবা প্রদানে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই ইউনিটটি চালু হওয়ার পর থেকে দুই শতাধিক কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস সেবা নিয়েছেন। যাদের এখন এই ডায়ালাইসিস দেওয়া হচ্ছে তাদের কাছ থেকে প্রতি ৬ মাসের জন্য ২২ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। তাদের সপ্তাহে দুবার করে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। বর্তমানে হাসপাতালে পাঁচ শতাধিক আবেদন জমা পড়ে আছে। এসব রোগীদের মধ্যে অনেকেই হতদরিদ্র তিনি আরও বলেন, যিনি একবার এই হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের সুযোগ পেয়েছেন, ওই যোগাবে আমৃত্য এটি নিতে হবে। কারও মৃত্যুজনিত কারণ অথবা কোনো রোগী বিশেষ কোনো কারণে অন্য কোথাও স্থানান্তর। হালেই কেবল একটি শয্যা খালি হয়। তখন নতুন একজনকে নেওয়া সম্ভব হবে। তবে রোগীদের কথা চিন্তা করে হাসপাতালের নতুন ভবনে ১০ শয্যার আরও একটি ডায়ালাইসিস ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষিত জনবল ও বরান্দ পেলেই সেটি চালু করা হবে।

আরও পড়ুনঃ  সাতক্ষীরায় সয়াবিন তেল জব্দ

ফেনীর সিভিল সার্জন মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘ফেনী জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে ১০ শয্যার আরও একটি ডায়ালাইসিস ওয়ার্ড চালু হলে সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে। শিগগিরই নতুন এ ওয়ার্ড চালু হবে।”

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন