শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নরসুন্দরের অর্ধশতক

নরসুন্দরের অর্ধশতক
  • চুল দাড়ি কামিয়ে চলে সংসার

কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৭৫) প্রায় ৫০ বছর থেকে খোলা আকাশের নিচে বাজারে ও গ্রামে গ্রামে চুল দাড়ি কামিয়ে চলে তার সংসার। ধীরে ধীরে নগর উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় তাদের কাজের ধরন। সরেজমিন উপজেলার থেতরাই বাজারে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ ৫০ বছরের পেশাকে ধরে রাখতে বাজরে ও রাস্তার পাশে বসে চুল-দাড়ি কেটে দিচ্ছে উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামের মোহাম্মদ আলী। সেখানে চুল দাড়ি কামিয়ে নেয়ার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকতে দেখা যায় শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত।

বাজারে অনেক সেলুন থাকলেও তারা খোলা আকাশের নিচে চুল দাড়ি কামিয়ে নিতে পছন্দ করেন। তারা বলেন বর্তমান সেলুনে ব্যায় বেশি হয়। এখানে অল্প টাকায় চুল দাড়ি কামিয়ে নেয়া যায়। তারা আরও বলেন আমাদের বাপ দাদার আমল থেকে আমরা খোলা আকাশের নিচে চুল দাড়ি কামিয়ে নিয়ে আসছি তাই সেলুনে কাজ করে নিতে ভালো লাগেনা।

চুল দাড়ি কামিয়ে নিতে আসা আশরাফ আলী (৭৫) বলেন, আমি খোলা আকাশের নিচে চুল দাড়ি কামিয়ে নিতে পছন্দ করি। তিনি বলেন বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় খোলা আকাশের নীচে ও গ্রামে গ্রামে চুল দাড়ি কামিয়ে দেয়া পেশার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন বাজারে বাজারে সেলুন হয়েছে চুল দাড়ি কামানোর জন্য দিতে হয় অনেক টাকা। খোলা আকাশের নীচে খরচ কম ভালো লাগে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুনঃ  দাদনের ফাঁদে আসহায় মানুষ

এছাড়া চুল দাড়ি কামিয়ে নিতে আসা আবুল হোসেন, কাসেম আলী ও জাইদুল ইসলাম সহ আরও অনেকে বলেন, আমরা সবসময় খোলা আকাশের নীচে মোহাম্মদ আলীর নিকট চুল দাড়ি কামিয়ে নেই। এখানে চুল কাটা মাত্র ৩০ টাকা সেভ করা মাত্র ১০ টাকা। খোলা আকাশের নীচে অল্প খরচে চুল দাড়ি কামিয়ে নেয়া যায় এ জন্য এখানে প্রতিদিন অনেক লোক আসেন বলে জানান তারা।

চুল দাড়ি কাটা মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার বাড়িভিটে তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে মাত্র ১০ শতক জমি ক্রয় করে কোন রকম বসবাস করছি। আমাকে কেউ এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে সহযোগিতা করেনি। অন্যের চুল-দাড়ি কেটেই চার মেয়ে ও দুই ছেলে সহ মোট ১১ সদস্যের ভরনপোষন সহ সংসারের খরচও চালিয়ে আসছি। মোহাম্মদ আলী বলেন জীবনের তাগিদে জীবিকা নির্বাহে বিনা দ্বিধায় ৫০ বছর ধরে বাজারে ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে এবং রাস্তার পাশে বসে বাচ্ছাদের চুল ও পুরুষের চুল-দাড়ি কেটে আসছি। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও বাজারে গিয়েও যুবক, শিশু,ও বৃদ্ধদের চুল-দাড়ি কাটি। অন্যের চুল-দাড়ি কামিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকম ভাবে চলে সংসার বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে থেতরাই বাজারের ইজারাদার বাবুল মিয়া বলেন, মোহাম্মদ আলী প্রতিদিন বাজারে  অত্যান্ত মনোযোগ সহকারে খোলা আকাশের নীচে বসে চুল দাড়ি কামিয়ে দেন। প্রতিদিন এখানে অনেক লোক আসেন। আমরা তার নিকট কোন খাজনা নেইনা। যা আয় করেন তা দিয়ে কোনরকম তার সাংসার চালায়। তবে সরকারি ভাবে তাকে সহযোগিতা করলে স্বাভাবিক ভাবে সংসার পরিচালনা করতে পারত বলে জানান তিনি।” 

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন