শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নড়াইল মুক্ত দিবস পালিত

নড়াইল মুক্ত দিবস পালিত

শনিবার ১০ ডিসেম্বর নড়াইল মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। ১৯৭১ এর এই দিনে এ দেশে অবস্থানরত পাক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক লেঃ জেঃ নিয়াজির আত্মসমর্পনের ছয় দিন পূর্বেই নড়াইল পাকহানাদার মুক্ত হয়। নড়াইলের স্বাধীনতাকামী বীর মুক্তিযোদ্ধারা জনতার সহায়তায় ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর সম্পুর্ণভাবে নড়াইলকে শত্রুমুক্ত করে। এ দিনটিকে স্মরনে রাখার জন্য নড়াইল জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজ স্নরন করছে সে দিনের কথা আর স্মৃতি চারন করছে স্বাধীনতার জন্য রক্ত দেওয়া সাথী শহীদদের কথা। অমুক্তিযোদ্ধা হায়েনার দল এবং তাদের উত্তরসুরিরা মুক্তিযোদ্ধা সেজে এবং স্বাধীনতার পক্ষের লোক হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মানসহ দেশকে অরাজকতার দিকে না নিতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখার জন্য স্বাধীনতার পক্ষের সরকার,শুভবুদ্ধি সম্পন্ন বুদ্ধিজীবী সহ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য কম কষ্ট করতে হয়নি নড়াইল বাসীকে। এক দিকে লুটেরাদের উৎপাত অন্যদিকে দেশীয় রাজাকার সহ পাক-সেনাদের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক বিভিষিকাময় রাত দিন পেরিয়ে এ দিনটি পেতে হয়েছিল নড়াইল বাসীকে।

৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় লোহাগড়া থানা। ৮ ডিসেম্বর লোহাগড়া থানা মুক্ত হলেও এর আগের দিন নড়াইল শহরে ঘটে যায় এক অঘটন। ৭ ডিসেম্বর নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের সিদ্দিক প্রফেসরের একটি সাজানো ফাঁদে পা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তার বাড়িতে যায়। এ সময় ঐ সিদ্দিক প্রফেসরের কুটচালের জালে মুক্তিযোদ্ধারা পা দিলে পূর্ব থেকে ওঁত পেতে থাকা রক্ত পিপাসু রাজাকার হায়েনার দল ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি যোদ্ধাদের উপর। অনেক মুক্তিযোদ্ধা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও পালাতে পারেনি নড়াইলের লোহাগড়ার জয়পুর গ্রামের মিজানুর রহমান ও মোঃ সায়েম। তারা তাদের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে ব্যর্থ হয় এ দেশীয় রক্ত পিপাসু পাক হানাদারদের দোসর রাজাকারদের কাছে। অবশেষে অর্দ্ধ মৃত মিজানুরকে একটি বাঁশে বেঁেধ ও সামান্য আহত সায়েমকে পিঠমোড়া করে বেঁেধ মুক্তিযোদ্ধা ধরেছি, মেরেছি এই বলে বীভৎস্য অবস্থায় সমস্ত নড়াইল শহরময় প্রদক্ষিন করেছিল এমনকি সেই  বর্বর দোসর কুখ্যাতরা সদর্পে ছবিও তুলেছিল।  মৃত মানুষও রেহায় পায়নি এসব রক্ত পিপাসুদের হাত থেকে। ৯ ডিসেম্বর চিত্রা নদীর পূর্ব পাড় থেকে মুক্তি বাহিনী ও মুজিব বাহিনীর বীর যোদ্ধারা সন্মিলিত ভাবে  নড়াইল শহর আক্রমন করে । এ সময় নড়াইলের রপগঞ্জস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা ডাক বাংলা মিলিশিয়া ক্যাম্প লক্ষ্য করে মূহুর্মূহু গুলি ছুড়তে থাকে বীর যোদ্ধারা। ১০ ডিসেম্বর খুব ভোরে বীর যোদ্ধারা ত্রিমুখি আক্রমন চালায়  ওয়াপদা ডাক বাংলাতে । মুক্তি সেনাদের আক্রমন সহ্য করতে না পেরে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর  মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বরে অবস্থানরত বিপুল পরিমান অস্ত্র সহ পাকবাহিনীর অধিনায়ক বেলুচ কালা খানের নেতৃত্বে ২২জন পাকসেনা ও ৪৫ জন রাজাকার অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে নড়াইল পাক-হানাদার মুক্ত হয়। আত্মসমর্পন করার পাশাপাশি কিছু এদেশীয় দোসররা পশ্চিম দিক দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মুক্ত হয় নড়াইল। একই দিনে মুক্ত হয় কালিয়া। নড়াইলের আকাশে উড়ে স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা। বাঁধ ভাঙ্গা শ্রোতের মত সাধারন মানুষ বেরিয়ে আসে নড়াইলে। সরকারি ভাবে নড়াইলে ৩ হাজার ৬ শত ২৩ জন শহীদ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে শহীদ হয়েছে তার দ্বিগুন। 

আরও পড়ুনঃ  আজ সন্ধ্যায় জনতার মুখোমুখি হবেন মেয়র আতিকুল

নড়াইল মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে ছিল সকাল ৯টায় নড়াইলের রুপগঞ্জে অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্বর থেকে র‌্যালি শুরু করে পর্যায়ক্রমে গণকবর, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, ৭১’ এর বধ্যভ’মি, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা ৭টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জারিগান। দিবসটি উপলক্ষে নড়াইল প্রেসক্লাব, নড়াইল চিত্রা থিয়েটারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক সংগঠনগুলোও বিভিন্নি কর্মসূচী পালন করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন