শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহাসড়কে পরিবহন সংকটে ভোগান্তি

মহাসড়কে পরিবহন সংকটে ভোগান্তি

গাজীপুর জেলা ও ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তে জৈনাবাজার এলাকায় গত তিনদিন পুলিশী প্রহরা ছিল। গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কোনো পুলিশি চৌকি বা তল্লাশী চোখে পড়েনি। ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পরিবহনের চাপও নেই। বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা বাসস্ট্যান্ডগুলোতে দীর্ঘসময় গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল একেবারেই কমে গেছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নমধ্যবিত্ত লোকেরা। বিভিন্ন কাজে বের হওয়া নিম্নমধ্যবিত্ত লোকদেরকে জীবিকার তাগিদে বরে হতেই হচ্ছে। কাজের জন্য বের হয়ে গাড়ী না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন পোশাক শ্রমিক নারীরা। তারা বাসার দৈনন্দিন কাজ শেষে হাতে অল্প সময় নিয়ে বের হয়। সড়কে পর্যাপ্ত গাড়ী না থাকায় তাদেরকে লেট করে অফিসে যেতে হচ্ছে।

শ্রীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী জৈনাবাজার গিয়ে দেখা গেছে সড়কের ইউটার্নের পুলিশি চেকপোস্ট এলাকাটিতে পুলিশের কোনো সদস্য নেই। স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক, ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েকদিন যাবত এ স্থানটিতে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের নিয়মিত পুলিশি প্রহরা ও চেকপোস্ট ছিল। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এমন কোনো চেকপোস্ট নেই। তবে দু’বার গাজীপুর জেলা পুলিশের একটি গাড়ী ইউটার্ন ঘুরে গেছে।

এছাড়া কিছু সিএনজি মহাসড়কের পাশে সাড়িবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও যাত্রী পাচ্ছে না। যাত্রী পেলেও অধিক ভাড়া চাওয়ায় যাত্রীরা সিএনজিতে চলাচল করতে পারছে না। গাজীপুর দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের সবগুলো প্রবেশমুখে তল্লাশি জোরদার করেছে পুলিশ। মিরের বাজার, শ্রীপুরের জৈনা বাজার, টঙ্গী ব্রিজের উভয় পাশে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করেছে।

আরও পড়ুনঃ  সারের কৃত্রিম সংকটে হতাশ চাষিরা

গাজীপুরের মাস্টারবাড়ী এলাকার ওয়েল্ডান পোশাক কারখানার রক্ষনাবেক্ষন বিভাগের ব্যবস্থাপক নাহিদ কামাল বলেন, সকাল ৮টা থেকে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে আছি। অফিসে যাওয়ার জন্য সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কোনো গাড়ী পায়নি। মহাসড়কে পরিবহন নেই বললেই চলে।

গাজীপুরের বিলাশপুর এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন আনিছুর রহমান। বোর্ড বাজার এলাকায় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বাসের জন্য সড়কে দাঁড়িয়ে আছি। এক ঘন্টা যাবত সড়কে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো যাত্রীবাহী বাস পায়নি। যেগুলো আসছে সেগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছে এবং ভিড়ের কারণে উঠা সম্ভব হচ্ছে না।

বেসরাকী প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবি আসমা আক্তার কনা ও শামীম বলেন, যেসব যাত্রীবাহী গাড়ী পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো দূরে কোথাও যেতে চাচ্ছে না। দূরের যাত্রীরা তাদের গন্তব্য যেতে পারছে না। আর যারা যাচ্ছে তাদেরকে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। 

যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশির কারণে জনমনে কিছুটা আতঙ্কও তৈরি হয়েছে। ফলে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঢাকার দিকে যাচ্ছেন না। তবে যারা জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যাচ্ছেন তারা পড়ছেন পুলিশের তল্লাশিতে। এসব কারণে সড়কে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা অনেকটাই কম।

জৈনাবাজার থেকে গফরগাঁও অঞ্চলিক সড়কে প্রতিদিন ১৩টি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চলাচল করে। তথ্য জানিয়ে চালক কবির হোসেন বলেন, প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে যাত্রী পাওয়া যায়। শনিবার সকাল পৌণে ১১টা পর্যন্ত একজন যাত্রীও পাওয়া যায়নি।

এদিকে, জেলার বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিএনপি’র নৈরাজ্য ও ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে মিছিল হচ্ছে। শ্রীপুর পৌরশহরে যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম ওয়াসিমের নেতৃত্বে মিছিলটি ষহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে নিয়ে শেষ হয়।

আরও পড়ুনঃ  সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় হিউম্যানিটির গরুর মাংস বিতরণ

কোনাবাড়ী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা যানবাহন তল্লাশি করছি। তবে কেউ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। কোনো দুষ্কৃতকারী যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রেখে সব যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী শফিকুল আলম বলেন, জেলা পুলিশের বিশেষ কোনো তল্লাশী টীম নেই। তবে নিয়মিত প্রতিটি থানা এলাকায় দুটি পুলিশ চেকপোস্ট থাকে। কেউ যেন নাশকতার উদ্দেশ্যে কোনোকিছু বহন করতে না পারে, এজন্য গাড়িতে তল্লাশি করা হচ্ছে। অন্যান্য দিনের মতো আজ শনিবারও গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে জেলায় মোট ১০টি চেকপোস্ট রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন