মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চেক ডিজঅনারে প্রতারণা, হয়রানিতে মাদ্রাসা সুপার

চেক ডিজঅনারে প্রতারণা, হয়রানিতে মাদ্রাসা সুপার

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের কায়েমপুর ইউনিয়নের কায়েমপুর গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা রফিকুল ইসলাম। স্থানীয় একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসার সুপার হিসেবে সামান্য ভাতা নিয়ে কোনোক্রমে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্বজনদের অনুরোধে ২০২১ সালে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড শাহজাদপুর শাখায় ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে একটি হিসাব খোলেন। আর সেটাই এখন তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকে হিসাব খোলার পর তিনি কোনো লেনদেন বা চেকবই উত্তোলন না করলেও ব্র্যাক ব্যাংক লি. শাহজাদপুর শাখা থেকে জালিয়াতি করে চেক বই উত্তোলন এবং চেকের পাতায় জাল করে স্বাক্ষর দিয়ে সেই চেক ডিজ-অনার করেছে তারই স্বজনেরা। এ নিয়ে ভুক্তভোগী মওলানা রফিকুল ইসলাম শাহজাদপুর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন এবং শাহজাদপুর প্রেসক্লাব বরাবর একটি লিখিত আবেদন দিয়েছেন।

ভুক্তভোগীর লিখিত আবেদন এবং সরেজমিনে জানা যায়, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে একই গ্রামের ভুক্তভোগী মাওলানা রফিকুল ইসলাম এবং তার আপন মামা মমতাজ প্রামানিক, মামাতো ভাই মাসুদ হোসেন, তার আরেক আত্মীয় ইকবাল হোসেন এবং শাহ জালালের সঙ্গে সন্দেহবশতঃ কারণে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এর আগে উভয় আত্মীয়ের সু-সম্পর্ক থাকাবস্থায় ভুক্তভোগী রফিকুল মামতো ভাই মাসুদের পরামর্শে ২০২১ সালে ব্র্যাক ব্যাংক লি. শাহজাদপুর শাখায় ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে একটি হিসাব খোলেন। যার হিসাব নং- ৬১০১২০৪৭৮৫৫২৫০০১। এদিকে, ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে মাসুদ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্ড়ে যোগসাজসে মওলানা রফিকুলের স্বাক্ষর এবং উপস্থিতি ছাড়াই ব্র্যাক ব্যাংক থেকে চেক বই উত্তোলন করে। পরে ওই চেকের পাতায় রফিকুলের স্বাক্ষর জাল/নকল করে এ যাবৎ ৪টি চেক সংশ্লিষ্ট ব্র্যাক ব্যাংক এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড, শাহজাদপুর সাব-শাখা থেকে ডিজ-অনার করে মামলা করার পূর্ব শর্তানুযায়ী রফিকুলকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ওষুধ খেয়ে বাড়ানো যাবে আয়ু

তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, মমতাজ প্রামানিকের অনুকূলে ১০ লাখ টাকার সিআরপি- ৪৫০২৯৪১ নম্বর চেক এবং ৮ লাখ টাকার সিআরপি- ৪৫০২৯৪৬ নম্বর চেক, ইকবাল হোসেনের অনুকূলে ৮ লাখ টাকার সিআরপি- ৪৫০২৯৪৪ নম্বর চেক, শাহ জালালের অনুকূলে ১০ লাখ টাকার সিআরপি- ৪৫০২৯৪৩ নম্বর চেক প্রদান করা হয়েছে। চেক প্রদানের কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, মাওলানা রফিকুলের সঙ্গে ওই ৪ জনই ব্যবসা করেছে। 

অপরদিকে ভুক্তভোগী রফিকুল জানান, তিনি জীবনে কোন দিন ব্যবসা করেন নাই। তিনি একটি হেফজখানা মাদ্রাসার দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার এবং দুটি মসজিদে ইমামতি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি আরও বলেন, একাউন্ট করার দিন ছাড়া আর কোনদিনই ওই ব্যাংকে জাননি তিনি। মূলতঃ ওই নির্বাচনের শত্রুতার জের ধরে তাকে হয়রানি করার জন্য তার স্বাক্ষর জাল করে ওই সব চেক ডিজ-অনার করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুক্তভোগী মাওলানা রফিকুল কোন দিনও উপরোক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে ব্যবসা করে নাই। এমনকি ভূয়া স্বাক্ষরের চেক গ্রহিতা উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গেরও কোন ব্যবসা নাই। শুধু তারা প্রভাবশালী হওয়ায় মাওলানা রফিকুলকে ফাঁসানোর জন্য এরকম হীন ও জালিয়াতি কাজ করে যাচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে।

এদিকে একাউন্ট হোল্ডার ছাড়া চেক বই উত্তোলেন বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংক লি. শাহজাদপুরের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আবু সাঈদ বলেন, একাউন্ট হোল্ডার ছাড়াও চেক বই প্রদান করা হয়। তবে, ব্যাংকের নির্দিষ্ট ফরমে প্রতিনিধি ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে একাউন্ট হোল্ডারের একাধিক স্বাক্ষর থাকে এবং ব্যাংক থেকে মোবাইল করে একাউন্ট হোল্ডারের কাছ থেকে তা নিশ্চিত করা হয়। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া আমি স্বাক্ষাৎকার দিতে পারবো না।

আরও পড়ুনঃ  গণহত্যায় উসকানিদাতা হিসেবে ৩২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ

এ ব্যাপারে এলাকার প্রভাশালী মমতাজ প্রামানিক প্রতিবেদককে জানান, চেকের বিষয় আদালত আলোচনা পর্যালোচনা করে বিচার করবে। এখানে তো অন্য কোনো আলোচনা চলবে না।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন