- ওয়াদা দেন নৌকায় ভোট দেবেন: প্রধানমন্ত্রী
- “রিজার্ভের সমস্যা নেই, সব ব্যাংক টাকা আছে’
যশোর শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা হয়েছে। স্টেডিয়ামের সভাস্থল ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। কোথায়ও ছিলো না কোন ঠাঁই। যেন পুরো যশোর শহর জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী জনসভার মঞ্চে উপস্থিত হন। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশ স্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে স্টেডিয়ামভরা জনতা স্লোগানে স্লোগানে তাকে বরণ করে নেন।
যশোরবাসীর কাছে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শামস-উল হুদা স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য যা যা দরকার, আমাদের সরকার কাজ করবে। আমি আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা চাই। একই সঙ্গে আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আপনারা আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন। আপনারা যা চাইবেন, আমি তার চেয়ে বেশি দেব। এ সময় উপস্থিত জনতা হাত তুলে সমর্থন প্রধানমন্ত্রীর কথায় সায় দেন।
রিজার্ভ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে এখন রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনা করছেন। অনেকে প্রশ্ন করেন, রিজার্ভ গেল কোথায়? আমরা তো রিজার্ভ অপচয় করিনি। মানুষের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছি। জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে, খাদ্যশস্য কিনেছি। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। করোনার টিকা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। এসব কাজে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে আমাদের। আমাদের সরকার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর কোনো সরকার রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি। পর্যাপ্ত রিজার্ভ হাতে রেখেই সব কাজ করছি আমরা। রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই, আমাদের সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। সামনের দিনেও কোনো সমস্যা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। এখানের মাটিতে আমার নানা শেখ জহুরুল হক শুয়ে আছেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর, তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল যে এখানে আসা যায়নি। আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে আইটি পার্ক করা হবে।
যশোরের খেজুর গুড়ের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যশোর সব সময়, একদিকে যেমন খেজুর গুড়ের দেশ আবার ফুলে ফুলে শোভিত, ফুল উৎপাদনেও যশোর ১ নম্বরে আছে। আমরা কৃষকের সবরকম সুযোগ করে দিচ্ছি। ১০ টাকায় তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। দুই কোটি কৃষক সেই কার্ড পান। কৃষি উপকরণের কোনও অসুবিধা যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমরা।’
খালেদা জিয়ার সময়ে দেশে ৪০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র মানুষ ছিল ২৫ ভাগ। তা আমরা ১০ ভাগে কমিয়ে এনেছি। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের জন্য কাজ করে। যশোরের ভবদহ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এক লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। এছাড়া অভয়নগরে ৫০০ একর জমিতে ইপিজেড নির্মাণ এবং মনিরামপুরে দারিদ্র্য বিমোচনে জহুরুল হকের নামে পল্লী একাডেমি নির্মাণ করা হচ্ছে।
জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে। খেলা হবে বিএনপির বিরুদ্ধে। খেলা হবে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। খেলা হবে হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। বিএনপির আরেক নাম বাংলাদেশ নালিশ পার্টি।
এর আগে বেলা ১২টা ২২ মিনিটে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। সভা পরিচালনা করেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। দুপুর ১২টার আগেই পূর্ণ হয়ে যায় জনসভাস্থল। দূরদূরান্ত থেকে হেঁটে মানুষ জনসভাস্থলে অনেকেই ঠুকতে পারেননি। ওইসময় দলীয় নেতা-কর্মীদের স্লোগানে প্রকম্পিত ওঠে জনসভাস্থল।
সভামঞ্চের সামনে জায়গা পেতে সকাল ৯টা থেকেই যশোর জেলার আট উপজেলাসহ আশপাশে পাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসেন। অনেকে ব্যাগে করে দুপুরের খাবারও নিয়ে আসেন। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ছবি সম্বলিত গেঞ্জি পরে কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভায় হাজির হন। নেতাকর্মীরা হাতে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও বহন করেন। এ জনসভাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনসভাস্থলে ঠাঁই না পেয়ে জনসাধারণ শহরের ঈদগাহ ময়দান, টাউনহল মাঠ, আদালত চত্বর, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, সিভিল কার্টে মোড়ে অবস্থান নিয়ে মাইকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন।
সভামঞ্চে ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযুষ ভট্টাচার্য, আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
উল্লেখ্য পঞ্চাশ বছর আগে ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর যেখানে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছেন। ইতিহাসের সেই পুনরাবৃত্তি দেখলো বাংলাদেশ।