শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছদ্মবেশে দাওয়াতি কার্যক্রম

ছদ্মবেশে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম

দীর্ঘদিন পর আবারও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছদ্মবেশে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম নীরবে নিভৃতে দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেছে। রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রিত কক্সবাজার শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠা ১৯টি মাদ্রাসাকে টার্নিং পয়েন্ট ধরে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে ছদ্মবেশী জঙ্গিরা। এর অংশ হিসেবে মাদ্রাসাগুলোতে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র বলছে, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুরনো রোহিঙ্গা যারা সব সময় ক্যাম্পের বাইরে থেকে নানা অপকর্মের কলকাঠি নাড়ে তাদের হাত ধরে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমসহ সক্রিয় হচ্ছে একাধিক জঙ্গি সংগঠন। স্থানীয়দের অভিযোগ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত প্রতিষ্ঠানসমূহে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা দিন দিন বাড়ছে। শুধু তাই নয়, গভীর রাতে গরু ছাগল জবাই করে ভাগবাটোয়ারা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব অপকর্মের নেতৃত্বে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নেতা রয়েছে। স্থানীয় সূত্রমতে, শাইখ ছালামত উল্লাহ, মৌলানা শফিক, কামাল হোসেন, ইদ্রিস জিহাদীসহ ৫ শতাধিক পুরনো রোহিঙ্গা নেতা আগে একাধিকবার হলেও তারা এখন সক্রিয়। তাদের মধ্যে অনেকে রামু বৌদ্ধ মন্দির, বিহার ও বসতবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ মামলার তালিকাভূক্ত আসামি বলেও তথ্য মিলছে।

গেল বছরের জুনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিটিটিসি) সদস্যরা রাজধানীর রামপুরা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চিহ্নিত কয়েকজন মাঝি ও পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা কোন কোন বেসরকারি সংস্থা আর আশ্রয়দাতা রোহিঙ্গা নেতাদের তালিকা তারা পেশ করেছে।

আরও পড়ুনঃ  ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গণঅবস্থান

সূত্রমতে, বিগত ২০১৭ নালে মানবতার দোহাই দিয়ে সাহায্যের আড়ালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উগ্রবাদ ছড়িয়েছে আনসার আল ইসলামসহ একাধিক জঙ্গি সংগঠন। এর আগে টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি শিবিরে রোহিঙ্গার সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে কম। ১৯৯২ সাল থেকেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী স্টাইলে গড়ে তুলেছে একাধিক উগ্রপন্থী সংগঠন। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ-সাহায্য দেয়ার নামে সক্রিয় ছিল আনসার আল ইসলাম।

রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে উগ্রবাদ মতাদর্শ প্রচার ও উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টায় অবস্থান করা আনসার আল ইসলাম সদস্য মারুফ চৌধুরী মিশু ওরফে ফারহানের সঙ্গে কিছু হেড মাঝি ও পুরনো কিছু রোহিঙ্গা নেতার সহযোগিতা ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা বলেন, আমরা শুধু রোহিঙ্গাদের পর্দার সামনেরটা দেখি। অন্তরালে পেছনে গল্প শুনলে পিলে চমকে উঠার মতো কাহিনিও রয়েছে রোহিঙ্গাদের। তাদের মধ্যে রয়েছে একটি অংশ ভয়ঙ্কর। রোহিঙ্গারা প্রথমে তাদের অসহায়ত্বের কথা বলে আশ্রয় খোঁজে। স্থান পাবার পর তাদের পুরনো নেতাদের (এনআইডিধারী) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠনে যোগ দেয়। বাংলাদেশে পা রাখতে পারলেই দাবি করে থাকে তারা বাংলাদেশি। তারা খোলস পাল্টাতে পারে যখন তখন।

সূত্রমতে, আরএসও, আলইয়াকিন নামে সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঁদাবাজি ইয়াবা, অস্ত্র মজুদ চোরাচালান ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শতাধিক রোহিঙ্গা ও অন্তত ১৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে বহু অস্ত্র উদ্ধার ও রোহিঙ্গা ডাকাতদের গ্রেপ্তার করেছে। কক্সবাজার, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও সাতকানিয়াতে গড়ে তোলা হয়েছে মাদ্রাসা ও এতিমখানার নামে বহু রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান। যদিও দ্বীনি শিক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়ে থাকে, তবে রাতের বেলায় রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওইসব মাদ্রাসায় বেশির ভাগই এনআইডিধারী রোহিঙ্গা শিক্ষক ও আশ্রয় ক্যাম্পের বাইরে অভ্যন্তরে থাকা রোহিঙ্গা ছাত্র।

আরও পড়ুনঃ  পিপিই-মাস্ক ব্যবসায়ীদের জুন পর্যন্ত দিতে হবেনা কোনো ভ্যাট

সম্প্রতি ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া আনসার আল ইসলামের সদস্য মারুফ চৌধুরী মিশু ওরফে ফারহানের সঙ্গে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত রোহিঙ্গা মাদ্রাসা প্রধান ও জাতীয় সনদধারী রোহিঙ্গা নেতাদের যোগাযোগ ছিল বলে জানা গেছে। সেই ঘটনার পর দীর্ঘদিন ধরে একাধিক মাঝি ও রোহিঙ্গারা গা ঢাকা দিয়েছেন। সেই চক্র আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা দমনে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন সতর্ক অবস্থায় আছে। যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিহত করার সক্ষমতা নিয়ে যৌথবাহিনী শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্প নয়, পুরো কক্সবাজারকে নজরদারিতে রেখেছে।

এ ব্যাপারে ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক (এডিশনাল ডিআইজি) আমীর জাফর বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে সন্ত্রাসীরা নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকার খবর পেয়ে আমরা অপারেশন রোড আউট শুরু করেছি। রোহিঙ্গাদের সব মাদ্রাসা ও মসজিদে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গত এক মাসে দুই শতাধিক দুষ্কৃতকারীকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।

অনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন