জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলার উঁচু নিচু পাহাড়ে আবাদ হয় সিলেটের বিখ্যাত সবুজ কমলার। মান ভালো স্বাদে ভরপুর সু-মিষ্ট রসালো এই কমলার সুনাম রয়েছে দেশে বিদেশে। দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে সুগন্ধি সবুজ এই কমলা সন্ধানে ছুটে আসেন লোকজন। সবার কাছে পরিচিত সিলেটের সবুজ কমলা। কিন্তু আবাদ হয় মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার অন্তর্গত লাঠিটিলা, লালছড়া, রুপাছড়া, জড়িছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, ডোমাবাড়ী, কচুরগুল এলাকায়।
স্থানীয় কমলা চাষীদের অভিযোগ দিন দিন কমছে কমলার উৎপাদন। কেন কমছে জানতে চাইলে তারা বলেন, বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির সাথে খাপ খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে জন্য কমলা চাষের মতো পেশায় সময় দিয়ে এখন আগের মতো জীবিকা চলে না। তীব্র খরা ও বিষাক্ত পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা কঠিন।
এসব সমস্যার কথা বলেছেন লালছড়া এলাকার বিখ্যাত কমলা চাষী জয়নুল মিয়া। তিনি বলেন, তীব্র খরার কারণে এ বছর কমলার ফুল ঝরে যায়। এতে বিগত বছর থেকে কমলার উৎপাদন এ বছর অনেক কম হয়েছে। কৃষি দফতর সঠিক ভাবে সহায়তা করলে আগামীতে বাড়বে উৎপাদন।
দেশে লেবুজাতীয় ফসলের সংকট মোকাবেলা করতে ও বিদেশ থেকে আমদানি রোধ করতে অর্থাৎ কমলা উৎপাদনে দেশে স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে সঠিক ভাবে পর্যাবেক্ষণ করে উৎপাদনে বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তর।
জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৯৬ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয়েছে। এ উপজেলায় সাধারণত খাসি ও নাগপুরি জাতের কমলা চাষ হয়ে থাকলেও বর্তমানে কৃষি বিভাগের লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষককে প্রশিক্ষণ, সার ও চারা প্রদান এবং স্প্রে মেশিন প্রদানের মাধ্যমে নতুন নতুন বাগান সৃজন করা হচ্ছে। এখানে বারি-১, বারি-২ ও দার্জিলিং জাতের কমলার জাত গুলো এ প্রকল্পের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
কমলাচাষীরা জানান, যখন কমলা গাছে ফুল আসে তখন বৃষ্টি বা সেচের দরকার হয়। এবার সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় ও সেচ দিতে না পারার কমলার ফলনে ধস নেমেছে। কোন ভাবে সময়মত সেচের ব্যবস্থা করা গেলে ফলন ভালো হত। প্রতিবছর কমলা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা লাভবান হলেও এবছর কামলা চাষে যা খরচ হয়েছে তা উঠবে না। ফলে এখানকার কমলা চাষিরা পরেছেন বিপাকে। কমলাচাষিদের সাথে আলাপকালে বাগান হারানোর আশঙ্কা নিয়ে তারা জানান, আমাদের এলাকায় সাফারি পার্ক হবে বলে সরকার ঘোষণা দিয়েছে। এখন যদি আমাদের শতাধিক বাগান এই সাফারি পার্কের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এখানে কমলা চাষ বন্ধ হয়ে যাবে। যদি সরকার এটা বিবেচনা করে, তাহলে আমরা কমলাচাষিরা বাঁচব।
কমলা শ্রমিক দুদু মিয়া বলেন, ১৫/১৬ বছর যাবদ কমলা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছি। এ বছরের মত এত খারাপ ফলন আর দেখি নি।
কমলাচাষী খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের এলাকায় ছোটবড় বেশ কিছু কমলা বাগান রয়েছে। এখানকার কমলার সুনাম রয়েছে দেশ বিদেশে। তবে গতকয়েক বছর ভালো ফলন হলেও এবছর ভালো ফলন না হওয়ায় কমলাচাষীদের মাথায় হাত পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, এ উপজেলায় সাধারণত খাসি ও নাগপুরি জাতের কমলা চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু কৃষি বিভাগের লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষককে প্রশিক্ষণ, সার ও চারা প্রদান এবং স্প্রে মেশিন প্রদানের মাধ্যমে নতুন নতুন বাগান সৃজন করছি। এখানে বারি-১, বারি-২ ও দার্জিলিং জাতের কমলার জাত গুলো এ প্রকল্পের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আশা করছি এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।