ভরা পূর্ণিমা তিথিতে কয়েক লাখ পূণ্যার্থী চলতি বছর কুয়াকাটার রাস উৎসবে মিলিত হবে। পঞ্জিকা মতে, সোমবার বিকেল ৪ টা ২৩ মিনিটে শুরু হবে পূর্ণিমা। থাকবে পরদিন বিকেল ৪টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শ্রী শ্রী কৃষ্ণের রাস উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সেই পূর্ণিমা তিথিতে ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশাল সমুদ্রে পূর্ণস্নান করবেন কয়েক লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষ পুণ্যার্থী। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধু-সন্ন্যাসী, পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর চলতি বছর রাস উৎসবে ব্যাপক লোকের সমাগম ঘটবে এমনটাই জানিয়েছেন রাস উৎসব আয়োজক সংশ্লিষ্টরা।
রাস উৎসবে আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতে চলতি বছর মাঠে থাকবে আনসার, ভিডিপি, পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা ও চেকপোস্টের মাধ্যমে পুণ্যার্থীদের ওপর নজর রাখা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
কুয়াকাটা রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ও কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার জানান, মঙ্গলবার প্রত্যুষে লাখো পূর্ণ্যার্থীর সমুদ্রস্নানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে পূন্যস্নান। প্রতি বছরের মত এবারও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত ও কলাপাড়ায় রাস মেলার আয়োজন করেছে রাস উৎসব আয়োজক কমিটি।
এদিকে কলাপাড়া পৌর শহরের শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৯ টায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শ্রী শ্রী কৃষ্ণের ৫ দিন ব্যাপী রাস উৎসবের অনুষ্ঠিকতা। আশ্রম প্রাঙ্গন সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। স্থাপন করা হয়েছে ১৭ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা। একই সাথে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানের দোকানীরা হরেক রকমের পশরা সাজিয়ে বসবে। আর সেই মেলার চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি এমনটাই জানিয়েছেন আয়োজকরা।
স্থানীয়রা জানান, স্নানের আগ মুহুর্তে সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেক মানতকারীরা মাথার চুল ন্যাড়া করাসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিন্ডদান করবেন। তারা পূণ্যের আশায় মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে বেল পাতা, ফুল, ধান, দুর্বা, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুর ইত্যাদি সমুদ্রের জলে অর্পণ করবেন। তবে উলুর ধ্বনি, গীতা পাঠ ও ঢঙ্কার বাদ্যে পুরো সৈকত থাকবে মুখরিত। পূণ্যস্নান সম্পন্ন করার পর পুণ্যার্থীরা দল বেঁধে কলাপাড়া পৌর শহরে অবস্থিত শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম আঙ্গিণায় ১৭ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন ও মেলায় মিলিত হবে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, দাপরযুগে কংশ রাজার অত্যাচারে মানবকুল যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল তখন মহান সৃষ্টি কর্তার নির্দেশে মানবকুলকে অত্যাচারী রাজার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, মানবকুলের কল্যানের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ আবির্ভূত হন এই ধরাধামে। ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কংস রাজাকে বধ করে মানবকূলকে রক্ষা করেন। পরবর্তিতে মানুষের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি মোচন করার মানসে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ শ্রী রাধীকাকে নিয়ে বৃন্দাবনের তমাল ও কদমকুঞ্জে নিষ্কাম প্রেমের উপাখ্যান রচনা করে। এর পরথেকে রাধা কৃষ্ণের অর্চনায় রাসলীলা বা রাসপূজা উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
কলাপাড়া শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মি. নাথুরাম ভৌমিক বলেন, রবিবার সন্ধ্য সাড়ে ৯ টার দিকে অধিবাসের মধ্যদিয়ে ঐতিহ্যবাহী রাস লীলা উৎসব ও মেলার অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। পাঁচদিন ব্যাপী রাস উৎসব অবিরাম চলবে। আগামী ১০ নভেম্বর কুঞ্জভঙ্গ ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে মন্দির প্রাঙ্গণে দোকানিরা বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছে। এছাড়া পুরো মন্দির এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
কলাপাড়া ইউএনও শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, যে সকল দর্শনার্থী আসবে তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক