শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সিত্রাং ভেঙেছে নৌকা--

জীবিকা নিয়ে শঙ্কায় মৎসজীবীরা

জীবিকা নিয়ে শঙ্কায় মৎসজীবীরা

মিরসরাইয়ে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রবল আঘাতে ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেছে জেলেদের মাছ ধরার ২৩টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত মৎসজীবী পরিবারগুলোর মাথায় যেন ভেঙে পড়েছে বাজ। জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা এখানকার শতাধিক মৎসজীবী। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর তা-বে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি জেলেদের। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে তারা মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার বরাবর করেছেন লিখিত আবেদনও।

গত ২৪ অক্টোবর রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বামনসুন্দর সুইস গেইট (বসুন্ধরা ৩ নাম্বার গেইট) ও সাহেরখালী ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা হচ্ছেন, নিমাই জলদাশ, রায়মোহন জলদাশ, সুমন জলদাশ, ভীম জলদাশ, আলতাফ হোসেন, শওকত হোসেন, সুরেশ চন্দ্র দাস, নিমাই চন্দ্র দাস, ইসমাইল হোসেন, ভোটন চন্দ্র দাস, দয়াল হরি, সুসিন্দ জলদাস, মানিক জলদাস, নেপাল জলদাশ, সুরেশ জলদাশ, মোশারফ হোসেন, মান্নান, শুমঙ্গল জলদাশ ও জদু দাশ, মানিক জলদাশ, শচীন্দ্র জলদাশ, জগন্নাথ জলদাশসহ ২৩ জন।

ইঞ্জিনচালিত নৌকা মালিক সুরেশ চন্দ্র দাশ বলেন, আমি ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে একটি বোট নিয়েছিলাম সাগরে মাছ ধরার জন্য। ২৪ তারিখ রাতে ঘাটে বাধা ছিলো বোটগুলো। সিত্রাংয়ের প্রভাবে আমার নৌকাটি ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। এখন কি করবো কিছু বুঝতেছি না। কোথায় থেকে ঋণের টাকা দিবো, কি করে পরিবারের জন্য বাজার করবো কিছুই মাথায় আসছে না।

সুরেশ আরও বলেন, যতক্ষণ নৌকা আছে ততক্ষণ আমাদের প্রাণ আছে। এ নৌকাগুলোই আমাদের জীবন। নৌকা দিয়ে সাগর থেকে মাছ ধরে যা বিক্রি করি তাতেই পরিবারের খরচ চলে। নৌকা ভেঙে যাওয়ায় আমার ছেলে-মেয়েগুলো অনেক কান্না করছে, কারণ না খেয়ে মরতে হবে আমাদের। আমরা চাই সরকার থেকে যেন আমাদের কিছু অনুদান দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ  একদিনে মৃত্যু ৩০, শনাক্ত ২৩৬৪ জন

মানিক জলদাশ বলেন, ঋণ নিয়ে আমরা এ ব্যবসা করতেছি। সরকারের কাছে আমাদের একটা চাওয়া যেন আমাদের একটু সহযোগিতা করেন, তাহলে আমরা একটু সচল ভাবে চলতে পারতাম। কারণ আমরা যেটা নিয়ে খাবো সেটা তো ভেঙে গেছে। তাই আমরা সাহায্য চাই সরকারের কাছে।
সুরেশ, নিমাই ও মানিকের মতো আরও ২৩ জন জেলে ঋণ নিয়ে সাগরে মাছ ধরার জন্য নৌকা নিয়েছেন। তাদের সবার নৌকাগুলো ভেঙে যাওয়ায় তারাও চিন্তায় পড়ে গেছেন। কিভাবে ঋণের টাকা জোগাড় হবে, ছেলে-মেয়েদের মুখে কিভাবে খাওয়ার তুলে দিবেন তা নিয়ে। তারা বলেন, এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের।

উপজেলার ১১নং মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ সব জেলে আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বল হারিয়ে জেলে পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব। আমার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো তাদের অনুদানের মাধ্যমে যেন পুনর্বাসন করা হয়।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় বামনসুন্দর ঘাট ও সাহেরখালী ঘাটে জেলেদের মাছ ধরার ২৩টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আমার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমি ৩০ অক্টোবর জেলা মৎস্য অফিসে একটি চিঠি প্রেরণ করেছি। তবে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন