শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৈকতে হেমন্তের উচ্ছ্বাস

সৈকতে হেমন্তের উচ্ছ্বাস

হেমন্তের শুষ্ক আরামদায়ক, নির্মল বাতাসের পদধ্বনি জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। এ অবস্থায় ছুটির দিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও পার্শ্ববর্তী পর্যটন স্পটসমূহ টইটম্বুর হয়ে উঠেছে। পর্যটকের আনাগোনায় লোকে লোকারণ্য সমুদ্র সৈকত। এতে খুবই খোশমেজাজে আছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। চলতি সপ্তাহে আরো বেড়েছে দেশি-বিদেশি পর্যটক। গত শুক্রবার ছুটির দিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, এ সপ্তাহে কক্সবাজারে পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন ৩ লাখের ও বেশি পর্যটক। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসে কক্সবাজারে। আর শুধুমাত্র শুক্র শনি দুদিনে সেই পর্যটকের সংখ্যা ছুঁয়ে যাচ্ছে তিন লাখের বেশি।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানান, ছুটির দিনে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। কক্সবাজারের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটের গেস্টহাউস রেস্টহাউজের ৯০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। এর অন্য একটি কারণ হচ্ছে শীতের পূর্বে এ সময় প্রতিবছর প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে।

এছাড়া দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো আছে। তাই পর্যটকেরা নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করছেন। এ কারণে বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা। শুধু তাই নয়, পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকায় কক্সবাজারে এ সপ্তাহে অধিক লোক সমাগম ঘটেছে। এমনটা মনে করেন ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ কেউ বলছেন ভিন্ন কথা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গেল কয়েক সপ্তাহ আশানুরূপ পর্যটক আসেনি কক্সবাজার। তাই বিলম্বে জমে উঠেছে কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলো।

পাবনা সরকারি স্কুলের আতিকুর রহমান বলেন, তিনি দীর্ঘ চারবছর পর পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসেছেন। এ চার বছরে কক্সবাজার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে তাই অনেকে ভ্রমণে বের হয়েছেন পরিবার পরিজন নিয়ে।

আরও পড়ুনঃ  ডাস্টবিনের অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রাজধানীবাসী

ঢাকা ডেমরার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সোহাইনুল আরেফীন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে নিরাপত্তাসহ সবক্ষেত্রে আধুনিকতার ছো্ঁয়া লেগেছে কক্সবাজারে। তখন ট্যুরিস্ট পুলিশ ছিল সীমিত। আর এখন পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। আছে প্রচুর উদ্ধারকর্মী। ইনানী, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও বিহারে মনের আনন্দে ঘুরেছি। কোথাও কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়নি। দিনের বেশির ভাগ সময় ছিল রৌদ্রময় ও আরামদায়ক। তাই সময় ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়। ফলে প্রকৃতিকে মনভরে উপভোগ করতে পেরেছি।

গত শুক্রবার ছুটির দিনে বিকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার জুড়ে ছিল মানুষ আর মানুষ। পর্যটকেরা সৈকতের বালিয়াড়ি আর নোনাজলে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ছিলেন। যেখানে সৈকতে এসে কেউ উঠছেন ঘোড়ার পিঠে, তুলছেন ছবি। কেউবা বিচ বাইকে কেউ স্পিডবোটে চড়ে ঘুরছেন সৈকতে লাবনী থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক ননী গোপাল জানান, হেমন্তের মৃদু শীত শীত ভাব মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। নাসরিন নিশু একজন প্রাইভেট কোম্পানির চাকরিজীবী। বাড়ি জয়দেবপুর। তিনি জানান, স্বামীসহ কক্সবাজার এসেছেন। পরিবেশ প্রকৃতি দেখে তিনি খুবই মুগ্ধ। খাওয়া থাকা নিয়ে তার কোনো প্রশ্ন নেই। এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া নিয়ে তিনি একটু বিরক্ত। তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী পর্যটন স্পটগুলো যা সত্যি মুগ্ধকর।

কুমিল্লার দম্পতি আইরিন আফরোজ ও নুরুল হুদা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতেই তারা কক্সবাজার এসেছেন। এসে হোটেল কক্ষ পেতে একটু ভোগান্তি পোহাতে হলেও সকাল থেকে সৈকত ভ্রমণে তা কেটে গেছে। হেমন্তের সমুদ্রের ঢেউ আর প্রচণ্ড গর্জন তাদের মুগ্ধ করেছে।

আরও পড়ুনঃ  দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কোনো রোগী নেই

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, কক্সবাজারে সাড়ে ৩ লাখ পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন। আর এর পরের সপ্তাহে এসেছেন প্রচুর পর্যটক। নিরাপত্তা দিতে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে। এর সঙ্গে সমুদ্র স্নান নিরাপদ করতে কাজ করছেন লাইফগার্ড কর্মীরাও। তিনি বলেন, পর্যটকদের ব্ল্যাক মেইল করে অতিরিক্ত ছবি তুলে বেশি টাকা দাবি করা কয়েকজনকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে একেবারে জিরো টলারেন্সে আছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

বিচ ম্যানেজম্যান কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, নানা কারণে কক্সবাজারে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক অনকূল পরিবেশ দুই নিরাপত্তা তৃতীয় কারণ কক্সবাজারে পর্যটনখাতে ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন নতুন পর্যটনস্পট তৈরি হওয়ায় নিত্যনতুন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। আশা করছি আগামী দিনে অফসিজনেও পর্যটকে ভরপুর থাকবে কক্সবাজার।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন