শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাছির ছোঁয়ায় রসের প্রস্তুতি

গাছির ছোঁয়ায় রসের প্রস্তুতি

দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত। এরই মধ্যে সাতক্ষীরার গাছিদের মধ্যে শুরু হয়েছে খেজুর রস সংগ্রহের হিড়িক। জেলার সবখানেই চলছে খেজুর রস সংগ্রহের কর্মযজ্ঞ। শীতের ভরা মৌসুমে রস সংগ্রহের জন্য শীতের আগমনের শুরু থেকেই খেজুর রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন গাছিরা।এখনও শীতের তীব্রতা দেখা না মিললেও এর মধ্যে বেড়েছে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা গ্রাম-গঞ্জের খেজুর গাছের কদর।

সাতক্ষীরার প্রতিটি মাঠের ক্ষেতের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছ জেলার অর্থনীতিতে আশীর্বাদ। শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে প্রায় বছরের অর্ধেক সময় স্বাচ্ছন্দ্যে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন জেলার কয়েক হাজার পরিবার।

তবে, জেলায় এবার খেজুর গাছ সংকটের কারণে প্রতি বছরের মতো এবছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছেন রস সংগ্রহকারিরা। জেলার গ্রামগুলোতে জীবন বৈচিত্রের সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ খেজুর গাছ সংরক্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে না করার কারণে সব অঞ্চলে দেশি খেজুর গাছ অনেকটা বিলুপ্তির পথে।

এতেকরে এক সময় খ্যাতি থাকলেও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ী এলাকার গাছি ইউনুচ আলী জানান, শীতকালে আগে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসতো গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। এখন আর সেটি লক্ষ করা যায় না।

আরও পড়ুনঃ  করোনা আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়া দৌলতপুরের ওসির মৃত্যু

একই এলাকার সুমন বিশ্বাস জানান, এবার ১০০ খেজুর গাছ তুলেছেন তিনি। এখান থেকে রস-গুড়, পাটালি বিক্রি করে ৫/৬ মাস সংসার চলে যাবে তার। এছাড়া গাছ তুলে যেসব খেজুরের পাতা পেয়েছেন। সেগুলো জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি খেজুর পাতা দিয়ে আর্কষনীয় ও মজবুত পাটি তৈরি করবেন তিনি। আর এগুলো বাজারে বিক্রিকরে বাড়তি অর্থ আয় করারও কথা জানান তিনি।

কলারোয়া উপজেলার গাছি আমিনুর রহমান জানান, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তোবা আমাদের এলাকায় খেজুর গাছ থাকবে না। একারনে এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন নিয়ে বড় করা।

এব্যাপারে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ডা. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, শীত এলেই গাছিরা প্রস্তুতি নেন। সাধারণত খেজুরগাছ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে কাটা হয়, যাতে সূর্যের আলো সরাসরি ওই কাটা অংশে পড়তে পারে। গাছের উপরিভাগের নরম অংশে চাঁছ দিয়ে রস নামানো হয়। একবার গাছে চাঁছ দিলে ২-৩ দিন রস পাওয়া যায়।

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  কৃষি অফিস থেকে গাছিদের মাঠপর্যায়ে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ ও ভালোমানের লালি বা গুড় উৎপাদনের বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করলে এর চাষ বাড়ানো সম্ভব। একই সঙ্গে গাছিদের প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা দিয়ে খেজুর রস আহরণে উৎসাহিত করাও প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন