শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোমায় ভৈরব নদ

কোমায় ভৈরব নদ
  • নওয়াপাড়া নদী বন্দর নিয়ে শঙ্কা
  • নদ ঘিরে টিকে আছে ১০ লাখের বেশি মানুষ

অব্যাহত দখল ও দূষণ, অপরিকল্পিত নদী ড্রেজিং, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদাসীনতা, অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণ আর ঘাট মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতায় ভৈরব নদী কোমায় চলে গেছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়ার স্পন্দন খ্যাত নদটির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তলদেশ পলিজমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। দু’তীরেই চর জাগতে শুরু করেছে। থমকে যাচ্ছে নদের স্বাভাবিক স্রোতধারা।

স্থানীয়রা বলছেন, এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে অচিরেই পায়ে হেঁটে পার হওয়া যাবে নওয়াপাড়ার ভৈরব নদী। আর পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হলে মুখ থুবড়ে পড়বে নওয়াপাড়া নদীবন্দর। হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়ী মোকাম নওয়াপাড়া ধ্বংসের শঙ্কা ঘিরে ধরেছে। আর তাতে বেকার হয়ে পড়বে ১৫ হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিক। পথে বসবে শতশত ব্যবসায়ী। কেবল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ও ব্যবসায়ী নয় পরোক্ষভাবে নদী বন্দরের সঙ্গে যুক্ত মোটর শ্রমিক ও ব্রোকার ইউনিয়নের শ্রমিকরাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভেঙে পড়বে এ অঞ্চলের অর্থনীতি। দেখা দেবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতর চরম অবনতি।

এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে নদী দখলদার, স্বেচ্ছাচারী ঘাট মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএকে নদী বাঁচাতে অচিরেই কার্যকর ভূমিকা রাখার দাবি তুলেছেন সচেতন মহল। দাবি তুলেছেন সঠিকভাবে নদী খনন ও গাইডওয়াল নির্মাণের। আর এমন দাবিতে সম্প্রতি নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদে মানববন্দনও করেছে বেশি কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নওয়াপাড়া নদী বন্দরের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অর্ধ কিলোমিটার জুড়ে নদীর দুই তৃতীয়াংশ চর জমে ভরাট হয়েছে। এছাড়া নদী বন্দরের নওয়াপাড়া জুট মিল সংলগ্ন এলাকা, বেঙ্গল খেয়াঘাট থেকে নওয়াপাড়া মাছ বাজার পর্যন্ত, নওয়াপাড়া গ্লোবঘাট, তালতলা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় অধিক পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদীতে খেয়াপারাপারেও চরম বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সবুজের চাদরে ঢাকা যমুনা চর

বিআইডব্লিটিএ সূত্রমতে, গেল বছরের ২৪ জুলাই থেকে বিআইডব্লিউটিএ এর প্রকৌশল (সংস্কার) বিভাগের আওতায় ভৈরব নদ সংস্কার তথা ড্রেজিং শুরু হয়। দুটি ড্রেজার মেশিন ভৈরব নদে এ খনন কাজ শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই লোকদেখানো ড্রেজিং কার্যক্রম চালানো হয়। একটি ড্রেজার বছরব্যাপীই বন্ধ থাকতে দেখা যায়। অপর মেশিনটি দিয়ে দায়সারা ড্রেজিং কার্যক্রম চালানো হয় যা নদী বন্দরের কোনো কাজেই আসেনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিআইডব্লিউটিএ এর প্রকৌশল (সংস্কার) বিভাগের আওতায় ভৈরব নদ সংস্কারের নামে চলা ড্রেজিং কার্যক্রম দু’চারজন বালু ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষা ছাড়া বন্দরের কোনো কাজে আসেনি। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএর মেশিনটিও খুলনা অংশে কাজ করছে। ফলে ভৈরব নদের নওয়াপাড়া অংশের বেহাল দশা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুন মণ্ডল বলেন, ভৈরব নদকে ঘিরে হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও ব্রোকার ইউনিয়নের ৫০ হাজারের অধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। রয়েছে নদীনির্ভর শতশত ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবার।

ফাল্গুন মণ্ডল দাবি করেন, নদটি ঘিরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লক্ষাধিক মানুষ টিকে আছে। তবে বিআইডব্লিউটিএ এ বন্দরের ক্ষেত্রে বরাবরই চরম উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে নদীটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গেছে। আমরা একের পর এক আন্দোলন সংগ্রাম করে এলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অচিরেই নদ খননসহ গাইডওয়াল নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ্ব এনামুল হক বাবুল বলেন, ভৈরব নদী না বাঁচলে ধ্বংস হয়ে যাবে নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী মোকাম। পথে বসবে হাজার হাজার পরিবার। তিনি এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ এর উদাসীনতা, ঘাট মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দখলকে দায়ি করলেন। তিনি দাবি জানান, অচিরেই ভৈরব নদী বাঁচাতে বন্দর ব্যবহারকারী, স্থানীয় সচেতন মহল ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে পরিকল্পিতভাবে নদী খননের পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  আজও প্রবাসীদের ভিড়, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের সহকারি পরিচালক মাসুদ পারভেজ নদী দখল, দূষণ ও নদী ভরাট হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নওয়াপাড়া নদীবন্দর রক্ষায় ভৈরব নদ খনন ও গাইডওয়াল নির্মানের পাশাপাশি বন্দর ব্যাবহারকারীদের নানামুখি সুযোগ সৃষ্টিতে বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে বিআডব্লিউটিএ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনা গৃহিত হলে নওয়াপাড়া নদীবন্দর তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে। তিনি দাবি করেন, নওয়াপাড়া নদীবন্দর রক্ষায় সম্প্রতি অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে যা চলমান থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন