শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব-

কৃষি-প্রাণিসম্পদে ব্যাপক ক্ষতি

কৃষি-প্রাণিসম্পদে ব্যাপক ক্ষতি

নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং চলে গেলেও এর বিরূপ প্রভাব রয়ে গেছে উপকূলীয় এলাকায়। সিত্রাং এর বিরূপ প্রভাবে ঝড়, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জেলার উপকূলীয় চার উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জে রোপা আমন ধান, শীতকালীন শাক সবজি ও পোল্ট্রি খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভুক্তভোগিরা সরকারি সহায়তা না পেলে শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, এর জের টানতে হবে ক্রেতাদেরও। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে সহায়তার আস্বাস প্রশাসনের।

আমন ছাড়াও মাঠে থাকা বিভিন্ন ধরনের গ্রীষ্মকালীন ও শিতের আগাম সবজি ছাড়াও পান, কলা ও পেপে বাগানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ৯৩৬ হেক্টর শীতকালীন ও ১৮০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

চরবাটা ইউনিয়নের মোঃ মনির হোসেন জানায়, আমার নিজের কোন জমি নেই। আমি বর্গা নিয়ে জমি চাষ করি পাঁচকানি জমিতে চাষ করতে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এখন ধান কাটতে লাগবে আরও এক লক্ষ টাকা কিন্তু এক লক্ষ টাকা ধান পাবো বলে মনে হয় না।

ভূইয়ার হাট এলাকার আমেনা বেগম বলেন, বাড়ির পাশে জায়গাটুকু শীতকালীন সবজি করে আমার পরিবার চলে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আবার যে শাক-সবজি চাষ করবো সে সামর্থ্য আমার নেই।

শহীদুল হক (উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নোয়াখালী) জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী নোয়াখালীতে প্রায় ৮ হাজার ৬৩৯ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাতাসের কারণে অধিকাংশ রোপা আমন হেলে পড়েছে। এতে ফলন কমে যাবে আমন ধানের। কৃষরা বলছেন, ধারদেনা করে আবাদ করা ফসল তাদের চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সর্বশান্ত হবার উপক্রম হয়েছে তাদের। সরকারি সহযোগিতা না পেলে কোনভাবেই এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।

আরও পড়ুনঃ  আনন্দ-উচ্ছ্বাসে পলো বাওয়া উৎসব

অপরদিকে সিত্রাং-এর তান্ডবে প্রাণি সম্পদের মধ্যে পোল্ট্রি সেক্টরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড বাসাতাসে বেশ কয়েকটি মুরগীর খামার পুরোপুরি বিদ্ধস্ত হয়। ঝড়ের বিপর্যয়ের কবলে পড়ে খামারে থাকা হাজার হাজার মুরগী ঘর চাপায় ও পানিতে ডুবে মারা যায়। খামারীদের অভিযোগ তাদের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে, অনেকে পথে বসার উপক্রম। কিন্ত সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে তারা কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ বা ক্ষতিপূরনের আশ্বাসও পাননি।

আহমদ উল্যাহ বলেন, আমার সহপাঠীরা চাকরির পেছনে ছুটছে। অনেকে ভাল চাকরিও পেয়েছে। কিন্তু আমি পতিত জমিতে কৃষিতে স্বপ্ন বুনতে চেয়েছি। তাই ৫ একর জায়গায় সমন্বিত কৃষি খামার করি। এক ঝড়ে আমার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে যা কোনো ভাবেই পূরণ করা সম্ভব না।

আহমদ উল্যাহ আরও বলেন, খামারের মুরগী গুলো ৩১ দিনের। আমি বাজারে বিক্রি করতে পারি নাই। বৃষ্টিতে বাজারে নিতে পারি নাই। ভেবেছি ঝড় শেষে বিক্রি করবো। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল আমার। খামারে খাদ্য ছিল প্রায় লাখ টাকার। এছাড়াও মেডিসিন ছিল প্রায় ২ লাখ টাকার। আমার কোমর ভেঙে গেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজী রফিকুজ্জামান  বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে নোয়াখালী জুড়ে প্রাণী সম্পদ বিভাগে প্রায় ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যেই পোল্ট্রি শিল্পে ক্ষতি বেশি। আমরা ঊর্ধ্বতনকে বিষয়টি জানিয়েছি। কোনো প্রকার সহযোগিতা পেলে তাদের দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসন বলছে, ঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার ঘরবাড়ি, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি কৃষি ও পোলট্রি ফার্ম ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছে। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা হয়েছে। যাচাইবাছাই শেষে ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারি সহযোগিতা আশ্বাস দেন তিনি। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেরই নেই নতুন করে আবাদ বা ব্যবসা শুরু করার সামর্থ্য নেই। এমন বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকার না দাঁড়ালে; কেবল কৃষকেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, এর জের টানতে হবে ক্রেতাদেরও।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন