শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেষ হলো ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থ

সমাপনী খ্রিস্টযাগের (মূল প্রার্থনা) মধ্যদিয়ে শুক্রবার দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বারমারী সাধু লিও’র ধর্মপল্লীতে শেষ হয়েছে  দু’দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত ফাতেমা রাণীর ২৪ তম বার্ষিক তীর্থ। ‘মিলন, অংশ্রগ্রহণ ও প্রেরণকর্মে মা মারিয়া’ এ মুল সুরের ওপর ভিত্তি করে  এই তীর্থে যোগ দেন প্রায় ৩০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক  খ্রিস্টভক্ত।

তীর্থ উদযাপন কমিটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে পুর্ণমিলন ও পাপ স্বীকার, ৪ টায় পবিত্র খ্রিস্টযাগ, রাত ৮ টায় আলোক শোভাযাত্রা, রাত ১১ টায় সাক্রামেন্তের আরাধনা ও রাত ১২ টায় নিশিজাগরণ অনুষ্ঠিত হয়। এই তীর্থে খ্রিস্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ নিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ী ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মাদার ম্যারির ৪৮ ফুট উচু প্রতিকৃতির  সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে ফাতেমা রাণীর প্রতি ভক্তি শ্রদ্বা জানান ও তার সাহায্য প্রার্থনা করেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থের উদ্বোধনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের ভিকার জেনারেল রেভারেন্ড ফাদার শিমন হাচ্চা। গতকাল শুক্রবার সকালে জীবন্ত ক্রুশের পথ ও বেলা ১২টায় সমাপনী খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থোৎসবের সমাপ্ত ঘোষণা করেন প্রধান বক্তা ঢাকা মহা খ্রিস্টধর্ম প্রদেশর ভিকার জেনারেল ও বনানীর মেজর সেমিনারীর প্রাক্তন রেক্টর গাব্রিয়ল কোরাইয়া ।

প্রধান বক্তা গাব্রিয়েল কোরাইয়া বলেন, বিশ্বে এখন মারামারি, অশান্তি ও যুদ্ধ লেগে আছে। মানুষ অশান্তিতে আছেন। তাই আমরা বিশ্ববাসীর শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে আমরা ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি। দুর দুরান্ত   থেকে আমরা পুণ্যের আশায় তীর্থযাত্রায় অংশ গ্রহন করেছি। এখান  থেকে নিজ গৃহে ফিরে তীর্থের শিক্ষা যাতে আমাদের খ্রিস্টিয় জীবনে প্রতিফলন ঘটিয়ে সুন্দর আদর্শ জীবন গঠন করি। এখানে তীর্থ যাত্রীরা এসে আধ্যাত্বিক জ্ঞান লাভ করায় এজন্য তিনি খ্রিস্টভক্তদের সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার আহবান জানান ।

আরও পড়ুনঃ  ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা

তীর্থ উৎসবের সমন্বয়কারী ও সাধু লিও’র ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত রেভারেন্ট ফাদার তরুণ বনোয়ারী বলেন, এ তীর্থস্থানটি পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরনে ১৯৯৮ সালে স্থাপন করা হয়েছে। সেই সময় থেকেই ফাতেমা রাণীর করুণা ও দয়া লাভের আশায় সারাদেশ থেকে তীর্থযাত্রীরা এখানে সমবেত হয়ে নিজেদের পাপ মোচনের জন্য প্রার্থনা করেন।

চলতি বছর সারাদেশের ক্যাথলিক খ্রিস্টভক্তরা মজাঁকজমকপূর্ণভাবে ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থ পালন করেছেন। আমরা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় শান্তিপুর্ণভাবে তীর্থ অনুষ্ঠান শেষ করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তীর্থ উৎসবের নিরাপত্তা বিষয়ক সমন্বয়ক রেভারেন্ড ফাদার ফিদেলিস নেংমিনজা বলেন, আমরা প্রশাসনিকভাবে সন্তোষজনক নিরাপত্তা পেয়েছি। এজন্য তিনি পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার, গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবকসহ নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের ধন্যবাদ জানান, শেরপুর জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার, পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন, নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবুবকর সিদ্দিক, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক, সাবেক ট্রাইবাল চেয়ারম্যান মি. লুইস নেংমিনজা  ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা খ্রিস্টভক্তদের সার্বিক খোঁজ খবর নেন। এদিকে তীর্থোৎসবের পাশেই জমজমাট মেলা বসে। মেলায় আদিবাসীদের বিভিন্ন পরিধেয় বস্ত্র, আসবাবপত্র, শো-পিস, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদির স্টল বসে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন