শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অসময়ে ভাঙছে যমুনা

অসময়ে ভাঙছে যমুনা

আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষা অনেক আগেই শেষ। ভাদ্র-আশি^নের শরৎ কেটে হেমন্তের কার্তিক চলছে। শীতের বার্তা নিয়ে কড়া নাড়ছে ঘণ কুয়াশা। এমন সময় ফের বর্ষা। বেশ কিছুদিন যাবত নদীর পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছে যমুনার চরাঞ্চলে ফসলি জমি। জমির ফসল ডুবে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় কৃষক। এরই মধ্যে সিত্রাংয়ে দুদিনের টানা বৃষ্টিতে পানি বেড়ে জমির ফসল আরেক দফায় ডুবেছে। এবার কৃষক দিশেহারা। সাথে যোগ হয়েছে নদী ভাঙন। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অঞ্চলের যমুনা নদীর পূর্বেপাড়ে ভাঙন অনেকটাই তীব্র। অসময়ের ভাঙনে ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষজন। এরমধ্যে ঘর্ণীঝড় সিত্রাং এর প্রভাব পড়ায় ভাঙনের তীব্রতা আরো বড়েছে। এদিকে যমুনা নদী থেকে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলণ ও নদীর পাড়ে খাল বানিয়ে পরিবহনের সেখানে বালুর স্তুব তৈরি করায় ভাঙন শুরু দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, নিকরাইল ইউনিয়নের কোনাবাড়ির একাংশ, পাতিতাপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ভাঙনের আতঙ্কে রাত পাড় করছেন নদী পাড়ের শত শত পরিবার। দিনের আলোয় ভাঙন না হলেও রাতের বেলায় ভাঙন শুরু হয় বেশি। এতে মানুষজন তাদের ঘর-বাড়ি ও আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে পারেন না। ফলে তাদের ঘরবাড়িসহ আসবাবপত্র নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে।

এদিকে ব্যক্তি উদ্যোগে চিতুলিয়াপাড়া, ভালকুটিয়া ও গ্রামের মানুষজন তাদের শত শত বছরের পৈতিক বসতভিটা যমুনা নদীর ভাঙ্গন রোধে মাটি দিয়ে ভরাট করে ব্যাগ ফেলেছেন। তবে তাদের এই উদ্যোগও কোন কাজে আসছে না। প্রমত্তা যমুনা নদী রাত-দিন ভেঙে যাচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে নদী পাড়ের এই পুরাতন জনপথের গ্রামগুলো মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

আরও পড়ুনঃ  কৃষিখাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

চিতুলিপাড়া গ্রামের নান্নু ও ফজল বলেন, কয়েকদিনের ভাঙনে শত শত বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও রইল না। বাড়ি-ঘর ও জমি রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। এরমধ্যে ঘুর্ণীঝড় সিত্রাং কারণে আরো ভেঙে গেছে নদীর পাড়। এছাড়া নদী পাড় ঘেষে বালু উত্তোলণ, পরিবহনের জন্য দানবের মত টলার চলাচল করায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাশীল দলের লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যমুনা নদীতে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হলেও প্রতিবাদ করা যায় না। শুষ্ক মৌসুমী এসব বালু খেকোরা যমুনার জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করা শুরু করবে। অনেক জমির মালিক কিছু টাকার লোভে বালু ব্যবসায়ীদের কাছে জমি ইজারা দিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। আবার কেউ জমি না দিলে জোরপূবর্কভাবেই জমি দখল করে বালুর ব্যবসা করছে। প্রতিবছরই যমুনা পানি বৃদ্ধি ও কমতে থাকার সময় ভাঙন শুরু হয়। প্রশাসনও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না।

জানা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নে বৈধ ও অবৈধ বালুর ঘাটগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। এই দুই ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি বালুর ঘাট রয়েছে। কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে এসব বালুর ঘাট পরিচালনা হয়ে আসছে। ঘাটপ্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় ঘাট মালিকদের। এইসব টাকা ব্যয় ধরা হয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের জন্য। এই কনসোর্টিয়ামের কমিটিতে রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

আরও পড়ুনঃ  দ্বন্দ্ব থেকে খুন

গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। এতে নদী পাড়ের মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছে সবর্স্ব হারিয়ে। আরো শতাধিক পরিবার ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে। ভাঙন এখনও অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু অংশে জিওব্যাগ ফেলেছিল ভাঙনরোধে। যেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে সেখানে এখনও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি ভাঙনরোধে। এছাড়া ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। অতিদ্রুতই তাদের আর্থিক সহায়তা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, যমুনা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনরোধের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ বালু ঘাট বা মহলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে ভাঙনের বিষয়টি জানা নেই। সেখানে ভাঙন শুরু হলে সেটি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন