শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পর্যটকদের পছন্দ----

মহাস্থানের কটকটি, খেয়ে দেখেছেন কি!

মহাস্থানের কটকটি, খেয়ে দেখেছেন কি?

বগুড়ার দইয়ের মতোই সারাদেশে সমাদ্রিত মহাস্থানের কটকটি। চারকোনা আকৃতির শুকনো মিষ্টান্নজাতীয় খাবার এখানকার পর্যটকদের মন কেড়েছে। উনিশ শতকের দিকে গুড়ের তৈরি মিষ্টান্নজাতীয় খাবারের যাত্রা শুরু হয়ে আজও তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। এখানকার পর্যটকদের কাছে এবং এলাকার ছোট-বোড় সকলের কাছে খাবারটি বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে খাবারটির সুনাম দেশ থেকে বিদেশেও ছড়িয়েছে।

খাবারটির নাম কেন কটকটি রাখা হলো এর ইতিহাস জানা সম্ভব না হলেও, খেতে কটকট শব্দ হওয়ায় এর নাম কটকটি রাখা হয়েছে বলে ধারনা অনেকের। প্রথমের দিকে তৈরী কৃত কটকটি বেশ শক্ত ছিল। কিন্তু এখন এই খাবারটি অনেকটাই নরম করে বানানো হয়। তাই কটকটি খেতে গিয়ে এখন আগের মতো তেমন কটকট শব্দ পাওয়া যায় না।

ঊনিশ শতকের দিকে বগুড়া সদর উপজেলার গোকূল ইউনিয়নের পলাশবাড়ী উত্তরপাড়া গ্রামের জয়নাল আলী মন্ডল, ভোলা মন্ডল ও গেদা মন্ডলের হাতেই কটকটির জন্ম বলে অনেকে জানান। জীবিকার তাগিদে নিজ বাড়িতে একেবারে সাধারণভাবে গমের আটা দিয়ে কটকটি বানিয়ে মহাস্থান, শিবগঞ্জ, মোকামতলাসহ এলাকার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতে শুরু করেন।

ধীরে ধীরে এই সুস্বাদু মিষ্টিজাতীয় খাবারটি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে মহাস্থানে মাজার জিয়ারত করতে আসা দর্শনার্থীরা তবারক হিসাবে কটকটিকেই প্রধান হিসাবে নেন। প্রথম দিকে কটকটি বানানো হতো গমের আটা দিয়ে। পরে স্বাদ ও মান বাড়াতে বানানোর পদ্ধতি ও উপকরণে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

আগে কটকটি ভাজতে তেল ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে ঘি ডালডা ইত্যাদি ব্যবহার করে তৈরী হয়। কটকটি তৈরি হয় কয়েক ধাপে। এর প্রধান উপকরণ সিদ্ধ সুগন্ধি চাল। চাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। একেবারে নরম হলে সেই চাল ছেঁকে শুকানোর জন্য রেখে দিতে হয় প্রায় পনেরো মিনিট। পানি শুকিয়ে গেলে ঢেঁকি, মেশিন বা অন্য উপায়ে একেবারে মিহি আটায় রূপান্তর করা হয়। এই আটার সঙ্গে মেশাতে হয় বিভিন্ন মসলা, সয়াবিন তেল। ভালোভাবে মিশিয়ে গাঢ় করে খামির করা হয়। এরপর আকৃতির জন্য আগে থেকে তৈরি করে রাখা ছাঁচ দিয়ে কেটে নিতে হয়। কটকটির আকৃতি সাধারণত এক থেকে দেড় বর্গইঞ্চি হয়ে থাকে। বড় বড় কড়াইয়েভাজ্য তেল, ঘি-ডালডার সংমিশ্রণে ভাজা হয়। লালচে রং ধরা পর্যন্ত চলে ভাজাভাজির পর্ব। ভাজা হয়ে গেলে গুড়ের রসে ভাজা কটকটি ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর ঠান্ডা হয়ে গেলেই খাওয়ার উপযোগী হয় স্বাদের কটকটি।

আরও পড়ুনঃ  চাটমোহরে দুস্থ নারীদের মাঝে বিনামূল্যে ছাগল বিতরণ

মহাস্থান বাজারে কটকটিকে কেন্দ্র করে প্রায় এক’শ টির বেশি দোকান গড়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে লাল মিয়া কটকটি হাউস, নাসির কটকটি, হামু মামা কটকটি প্যালেস, আলাউদ্দিন কটকটি ভান্ডার, জিন্নাহ কটকটি ভা-ার, ফাতেমা কটকটি প্যালেজ, আল আমীন কটকটি প্যালেস, লায়েব কটকটি ভান্ডার, শাহাদত কটকটি ভান্ডার, মিলন কটকটি ভান্ডার, শাহিন কটকটি ভান্ডার, ফাতেমা কটকটি ভান্ডার, মনছের কটকটি ভান্ডার, আলাউদ্দিন কটকটি ভান্ডার। এসব দোকানের কোনোটিতে প্রতিদিন দুই থেকে সাত মণ কটকটি বিক্রি হয়। আকৃতিতে খুব একটা পার্থক্য দেখা না গেলেও স্বাদে একটির সঙ্গে আরেক দোকানের তফাত রয়েছে। অবশ্য উপাদানের ভিন্নতার জন্য যেমন স্বাদে আলাদা, তেমনি দামেও রয়েছে রকমফের। ৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় কটকটি। বিক্রেতাদের মধ্যে কয়েকজন বলেন ব্যবসায় এখন তেমন একটা লাভ হচ্ছেনা, কারন প্রতিটা দ্রব্যে মুল্য চড়া। এখন চল্লিশ কেজি কটকটি তৈরিতে খরচ পরে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা। এখন বিক্রয় হচ্ছে সাড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা।

মহাস্থানে বেড়াতে আসা ব্রাক্ষনবাড়িয়ার পর্যটক জামাল উদ্দিন দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, আমি ছয় বছর আগেও মহাস্থানে বেড়াতে এসেছিলাম। ফেরার সময় দশ কেজি কটকটি নিয়ে গিয়ে আমার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের দিয়েছিলাম। সেসময় আমার এক বন্ধু লন্ডন থেকে দেশে এসেছিলো। আমার দেয়া কটকটি খেয়ে তার বেশ ভালো লেগেছিলো। সে আবার কটকটি খাওয়ার জন্য ফোন করেছে। বন্ধুকে কটকটি খাওয়াবো বলেই আবার মহাস্থানে বেড়াতে আসা।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন