বৃহস্পতিবার, ২৫শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হাজার ফুলের মৃত্যু

রাজশাহীতে ঝরেছে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী

রাজশাহীতে ঝরেছে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী

গোদাগাড়ী উপজেলার খারিজাগাঁতি গ্রাম। সবুজ ঘেরা ওই গ্রামের রাস্তা, মাঠে হেসে খেলে বেড়ানো এক কিশোরী ববি (১৪) (ছদ্মনাম)। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। চঞ্চল চোখে তার হাজার স্বপ্ন খেলা করতো। সাথীদের কাছে ববি গল্প করতেন যে, বড় হয়ে তিনি শিক্ষক হবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন মিশে যায় বাল্যবিয়ের থাবায়। করোনার জন্য পারিবারিক চাপে তার শিক্ষাজীবনের সম্পাপ্তি ঘটে। পরিবার থেকে কিশোরী ববিকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। বাল্যবিয়ের কারণে ববি’র মতো হাজার হাজার কিশোরীর স্বপ্ন এভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।   

সম্প্রতি সময়ে দেশে এক বছরে বাল্যবিয়ে বেড়েছে ১০ শতাংশ। বাল্যবিয়ের শিকারে ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী। ভবিষ্যত যাদের উজ্জল ছিল তারা পিছিয়ে পড়ছে বাল্যবিয়ের কারণে। করোনাকালে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। এ সময়ে বুলিংসহ নানা ধরনের সহিংসতার ঘটনায় মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারো (বিবিএস) ও ইউনিসেফের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিকস্) ২০১৯ অনুসারে, ১৮ বছর বয়সের নিচে এ হার ৫১ শতাংশ।

ওই জরিপে উঠে এসেছে যে প্রতিটি জেলায় বাল্যবিয়ের হার এক মতো নয়। রাঙামাটিতে বাল্যবিবাহ ৪ শতাংশ। কিন্তু লক্ষ্মীপুরে বাল্যবিয়ের হার ৪০ শতাংশ। জরিপের সময় দেখা গেছে, বিবাহিত ওই মেয়েদের ১৫ শতাংশ ছিল অন্তঃসত্ত্বা। বিবাহিত মেয়েদের মাত্র ২৪ শতাংশ স্কুলে ফিরেছে।

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের একটি চিত্রে বাল্যবিয়ের ভয়াবহ রূপটি ফুটে উঠেছে। চলতি বছর ৩০ হাজার শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। যাদের বেশিরভাগই বাল্যবিয়ের শিকার।

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম জানান, বোর্ডে এবার এসএসসি পরীক্ষার আগে বিভাগের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। নবম শ্রেণিতে তারা নিবন্ধন করলেও এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেনি।

আরও পড়ুনঃ  এক মাসেই এক-তৃতীয়াংশের বেশি দাফন বেড়েছে ঢাকায়

রাজশাহী বোর্ডের অধীনে বিভাগের আট জেলায় এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ১ হাজার ৫৩৫ এবং ছাত্রী ৯৫। সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা। রাজশাহী  বোর্ডে মোট শিক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ১৩১ জন। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৫১ জন। বাকি ২৯ হাজার ৮৮০ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেনি। তারা ঝরে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঝরে পড়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মেয়ে বলে জানা গেছে।

দেশের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ার মধ্যে রাজশাহী বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রমে প্রথম। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এই বিষয়ে জানতে চাওয়ায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সালমা জান্নাত ঊর্মি বলেন, যোগাযোগ পদক্ষেপ বা পদ্ধতিগুলো কাঙ্খিত জনগোষ্ঠীর কাছে সঠিক মাত্রায় পৌঁছাতে পারছে না এবং সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার  কারণে  অনেক পরিবারই বাল্যবিয়েকে সমস্ত সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে দেখছে। যার কারণে বাস্তবতা বোঝা সত্ত্বেও এটা কমানো যাচ্ছে না। বাল্যবিবাহ বন্ধ ও মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। এবং এটা প্রতিরোধ করার জন্য সাংস্কৃতিক জাগরণকে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।

রাজশাহী বোর্ড চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা হ্রাসের কারণ বেশ কয়েকটি হতে পারে। তার মধ্যে কারোনাকালীন পাঠদানের সমস্যা ও বাল্যবিয়ে অন্যতম কারণ।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন