শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিলাইছড়িতে ঝর্ণার হাতছানি

বিলাইছড়িতে ঝর্ণার হাতছানি

প্রকৃতি আর মেঘ-পাহাড়ের সঙ্গে মিতালী

প্রকৃতির সৌন্দর্য ঘেরা রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ির গাছকাটাছড়া ঝর্ণা। এখানে প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী করতে একবার হলেও চলে যেতে হয় সেখানে। হাল-বিল, নদ-নদী, পাহাড়, লেক সবকিছু যেন একসাথে মিলবন্ধন। অতিথি পরায়ণ বিলাইছড়িবাসী। কর্ণফুলি লেক থেকেই উৎপত্তি হয়েছে ৫টি শাখা নদী তার মধ্যে ১টি নদী হলো রাইংখ্যং নদী। সেই নদীর উৎস হচ্ছে সুউচ্চ পাহাড়ের ঝিঁড়ি, ঝর্ণা, ছড়া থেকে। পাহাড়ের রয়েছে শত শত ছোট-বড় অনেক ঝর্ণা।

তেমনিভাবে বিলাইছড়িতে রয়েছে অনেক বড় বড় ঝর্ণাও। যেমন- ‘নকাটাছড়া ঝর্ণা, ছিনামৌন ‘স্বর্গপুর ঝর্ণা’, ‘গাছকাটাছড়া ঝর্ণা’, ‘মুপ্যাছড়া ঝর্ণা, ‘ধূপপানী ঝর্ণা’সহ অসংখ্য মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা-এজন্য ঝর্ণার জন্য খ্যাতও বলা যাবে বিলাইছড়িকে। অন্য ঝর্ণা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা দেখতে সুন্দর এই ‘গাছকাটাছড়া ঝর্ণা’। এই ঝর্ণাটি বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত।

উপজেলার মোট আয়তন ৭৪৫.১৫ বর্গকিলোমিটার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজারের ওপরে। ভারত ও ময়ানমার দুই দেশের সীমানা রয়েছে এই উপজেলায়। রয়েছে বিভিন্ন সম্প্রাদায়ের বাসিন্দা। সামাজিক সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ, ভিন্ন ভিন্ন  পোশাক পরিচ্ছদ, খাবার- দাবারে রয়েছে ভিন্নতা। তাদের বসবাস পাহাড়ের নিচে, নদীর ধারে, ছড়ার পারে কিংবা সুউচ্চ পাহাড়ে। এজন্য বিলাইছড়ি উপজেলা তো নয় যেন এক মায়াবী স্বর্গ।

প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু হতে রিমঝিম রিমঝিম করে সবসময় বৃষ্টির মতো পানি পড়তে থাকে। ভিজলে মুহূর্তের মধ্যেই শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। চৈত্র মাসে খরা রোদেও কোন রকম পৌঁছাতে পারলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ভুলে যায় ঝর্ণার পানি পরশ করলে। গ্রীষ্মকালেও তীব্র শীত অনুভূত হয় এ ঝর্ণায়। খুব বেশি ঠাণ্ডা অনুভুত হয়। শুভলং, হিমছড়ি, সীতাকুণ্ড এবং মাধবকুণ্ড অন্যান্য ঝর্ণার চেয়ে ও কোনো অংশে কম নয়। হার মানাবে দেশের বেশ অন্যান্য বড় বড় ঝর্ণাকে।

আরও পড়ুনঃ  হাতি হত্যায় অবৈধ দখলদারীদের সস্পৃক্ততা

পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ঝর্ণা রক্ষায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। গাছকাটাছড়া ঝর্ণা বিলাইছড়ি উপজেলায় ১নং সদর ইউনিয়নে ৩ নং কুতুব দিয়া ওয়ার্ডের গাছকাটাছড়া দোসরী পাড়ায় অবস্থিত। যা কাপ্তাই হরিনছড়া শেষসীমানা ও বিলাইছড়ি উপজেলার ১২২ কুতুবদিয়া মৌজার শেষ সীমানায় অবস্থিত। যেতে হলে কাপ্তাই হতে বিলাইছড়িতে নৌ-পথে আসা যাবে। বিলাইছড়ি সদর থেকেও তেমন দূরে নয়।

বিলাইছড়ির নিলাদ্রী রিসোর্ট বাদেও রয়েছে  হোটেল- মোটেল। সেখানে রাত্রি যাপনের পর ভোর সকাল ৮টায় কান্ট্রি  রিজার্ভ বোটে উপজেলা রিসোর্ট থেকে দেখা মিলবে সারাদিন মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা। পূর্ণিমার সময় চাঁদকে কাছেই দেখার মতো আরেক দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। এছাড়াও রয়েছে বাজার এলাকায়  স্মৃতিময় হোটেল এণ্ড রেস্টুরেন্টে এবং নিখিল রেস্টুরেন্টে, হাসান রেস্টুরেণ্ট ও সেতু হোটেল এণ্ড রেস্টুরেন্টে।

রাস্তায় যাওয়া পথে পথে দেখা মিলবে নদীর দুইধারে পাহাড়, পাহাড়ি গ্রাম, দেখা মিলবে টংঘর – মাছাংঘর আরও দেখা মিলবে- বন্য হাতি, হরিণ, বন মোরগ, বনবিড়াল, উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, শুকর,  ময়না, ঘুঘু কোকিল, মটুরাসহ অসংখ্য পশু-পক্ষির ও তাদের কলকাকলি।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন