শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রানজিট ফি নির্ধারণে প্রাধান্য পাবে ব্যবসা

ট্রানজিট ফি নির্ধারণে প্রাধান্য পাবে ব্যবসা

ভূমিকা রাখবেন ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশ-ভুটানের ট্রানজিটের ক্ষেত্রে ব্যবসার দিকটা প্রাধান্য পাবে। সেখানে দেখা হবে ট্রানজিট দিলে আমাদের বেশি লাভ না ট্রানশিপমেন্টে। যদিও এখনো ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্টের ব্যাপারে চার্জ কত হবে তা নির্ধারণ হয়নি। এ বিষয়ে ফিসিবিলিটি স্টাডি করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে বলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক আনন্দবাজারে সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. আনিসুর রহমান।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশের দাবি ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্ট দিলে নিরাপত্তা কি বিঘ্নিত হতে পারে? এই প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম-সচিব বলেন, ইউরোপের অনেক দেশ আছে তাদের মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে অথচ পরস্পরের মধ্যে ট্রানজিট চালু আছে। এটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি তৈরি করবে না। বরং একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।

ট্রানজিটে টনপ্রতি কিলোমিটারে ফি কত নির্ধারণ করা হয়েছে জানতে চাইলে আনিসুর রহমান বলেন, এখনো ফি নির্ধারণ করা হয়নি। ইতিপূর্বে আমরা তাদের রেট পাঠিয়েছিলাম। পরবর্তীতে তারাও পাঠিয়েছে। আসলে ভুটান বাংলাদেশ ট্রানজিট ফিটা যখন ৪ লেন করা হবে তখন সেটি রিভিউ করা হবে। এখন ভারতের সঙ্গে আমাদের বিদ্যামান দর আছে ১ টাকা ৮৫ পয়সা প্রতি কিলোমিটার। সেটিই আপাতত বহাল আছে। এই হার বাড়বে কিনা পরবর্তীতে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আনিসুর রহমান বলেন, ট্রানজিটের ফি নির্ধারণ বিষয়ে ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগের বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পাদিত “এগ্রিমেন্ট অন দ্যা ইউস অব চট্টগ্রাম এন্ড মংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গডস টু এন্ড ফ্রম ইন্ডিয়া” আলোকে টোল নীতিমালা ২০১৪ অনুযায়ী ১৫ টন ওজনের পণ্যবাহী মিডিয়াম ট্রাকের ৮টি রোডের মাশুলের হার বাংলাদেশি টাকায় ২ টাকা প্রতি টন প্রতি কিলোমিটার এর পরিবর্তে ১টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণ করে সম্মতি দেয়। সেই বছরের ১৫ জুন এটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশে রেড লিস্টেড বাংলাদেশ

অর্থ বিভাগের সম্মতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে সড়কপথে পণ্যসামগ্রী নির্ধারিত স্থলবন্দরসমূহে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সড়কপথে ৮টি রোডের যে মাশুল নির্ধারণ করা হয় তা হচ্ছে- ১নং রোডে চট্টগ্রামবন্দর-ফেনী-কুমিল্লা-ময়নামতি-ধরকার-আখাউড়া (চট্টগ্রামবন্দর-আখাউড়া) দূরত্ব হচ্ছে ২৩০ কিলোমিটার, মাশুল ২০টাকা, চুক্তির আওতায় মাশুল আদায়যোগ্য অংশের দৈর্ঘ্য ২১৮ কি.মি, মাশুল আদায়ের হার ১.৮৫ টাকা, সড়ক ব্যবহারে মাশুল মিডিয়াম ট্রাক ৬ হাজার ৫০ টাকা, সওজের বিদ্যমান চুক্তির আওতায় টোলসহ আদায়যোগ্য মোট মাশুল ৬ হাজার ৭০ টাকা।

২নং রোডে চট্টগ্রামবন্দর-কুমিল্লা-ময়নামতি-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-শায়েস্তাগঞ্জ-সিলেট-চরখাই-সুতারকান্দি (চট্টগ্রামবন্দর-শেওলা), দূরত্ব হচ্ছে ৪২৭ কিলোমিটার, সওজের বিদ্যমান টোলে দূরত্ব ৮৬ কি.মি. ও মাশুল ১৩০ টাকা, চুক্তির আওতায় মাশুল আদায়যোগ্য অংশের দৈর্ঘ্য ৩৪১ কি.মি, মাশুল আদায়ের হার ১.৮৫ টাকা, সড়ক ব্যবহারে মাশুল মিডিয়াম ট্রাক ৯ হাজার ৪৬৩ টাকা, সওজের বিদ্যমান চুক্তির আওতায় টোলসহ আদায়যোগ্য মোট মাশুল ৯ হাজার ৫৯৩ টাকা।

৩নং রোডে চট্টগ্রামবন্দর-ফেনী-কুমিল্লা-বিবিরবাজার (চট্টগ্রামবন্দর-বিবিবাজার) দূরত্ব হচ্ছে ১৫৫ কিলোমিটার, সওজের বিদ্যমান টোলে দূরত ১২ কি.মি ও মাশুল ২০টাকা, চুক্তির আওতায় মাশুল আদায়যোগ্য অংশের দৈর্ঘ্য ১৪৩ কি.মি, মাশুল আদায়ের হার ১.৮৫ টাকা, সড়ক ব্যবহারে মাশুল মিডিয়াম ট্রাক ৩ হাজার ৯৬৮ টাকা, সওজের বিদ্যমান চুক্তির আওতায় টোলসহ আদায়যোগ্য মোট মাশুল ৩ হাজার ৯৬৮ টাকা।

৪নং রোডে দূরত্ব হচ্ছে ৪৪২ কিলোমিটার, সওজের বিদ্যমান টোলে দূরত ৮৬ কি.মি ও মাশুল ১৩০ টাকা, চুক্তির আওতায় মাশুল আদায়যোগ্য অংশের দৈর্ঘ্য ৩৫৬ কি.মি, মাশুল আদায়ের হার ১.৮৫ টাকা, সড়ক ব্যবহারে মাশুল মিডিয়াম ট্রাক ৯৮৭৯ টাকা, সওজের বিদ্যমান চুক্তির আওতায় টোলসহ আদায়যোগ্য মোট মাশুল ১০ হাজার ৯ টাকা।

আরও পড়ুনঃ  পাকিস্তানে ভারী বর্ষণ ও বজ্রপাতে ৩৯ জনের মৃত্যু

৫নং রোডে দূরত্ব হচ্ছে ৩৪৯ কিলোমিটার, চুক্তির আওতায় মাশুল আদায়যোগ্য অংশের দৈর্ঘ্য ৩৪৯ কি.মি, মাশুল আদায়ের হার ১.৮৫ টাকা, সড়ক ব্যবহারে মাশুল মিডিয়াম ট্রাক ৯ হাজার ৬৯৯ টাকা, সওজের বিদ্যমান চুক্তির আওতায় টোলসহ আদায়যোগ্য মোট মাশুল ৯ হাজার ৬৯৯ টাকা।

৬নং রোডে দূরত্ব হচ্ছে ৪৯৪.৫০ কিলোমিটার, সওজের বিদ্যমান টোলে দূরত ৭৪ কি.মি ও মাশুল ১১০ টাকা, চুক্তির আওতায় মাশুল আদায়যোগ্য অংশের দৈর্ঘ্য ৪২০.৫০ কি.মি, মাশুল আদায়ের হার ১.৮৫ টাকা, সড়ক ব্যবহারে মাশুল মিডিয়াম ট্রাক ১১ হাজার ৬৬৯ টাকা, সওজের বিদ্যমান চুক্তির আওতায় টোলসহ আদায়যোগ্য মোট মাশুল ১১ হাজার ৭৭৯ টাকা।

৭নং রোডে দূরত্ব হচ্ছে ৩১৩ কিলোমিটার, চুক্তির আওতায় মাশুল আদায়যোগ্য অংশের দৈর্ঘ্য ৩১৩ কি.মি, মাশুল আদায়ের হার ১.৮৫ টাকা, সড়ক ব্যবহারে মাশুল মিডিয়াম ট্রাক ৮ হাজার ৬৮৬ টাকা, সওজের বিদ্যমান চুক্তির আওতায় টোলসহ আদায়যোগ্য মোট মাশুল ৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।

৮নং রোডে দূরত্ব হচ্ছে ৫০৯.৫০ কিলোমিটার, সওজের বিদ্যমান টোলে দূরত্ব ৭৪ কি.মি ও মাশুল ১১০ টাকা, চুক্তির আওতায় মাশুল আদায়যোগ্য অংশের দৈর্ঘ্য ৪৩৫.৫০ কি.মি, মাশুল আদায়ের হার ১.৮৫ টাকা, সড়ক ব্যবহারে মাশুল মিডিয়াম ট্রাক ১২ হাজার ৮৫ টাকা, সওজের বিদ্যমান চুক্তির আওতায় টোলসহ আদায়যোগ্য মোট মাশুল ১২ হাজার ১৯৫ টাকা।

যুগ্ম-সচিব বলেন, এসব শুধু সড়কপথের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নৌপথ ও রেলপথ আলাদাভাবে ফি নির্ধারণ করবে। তবে আমাদের দেখতে হবে ট্রানজিট না ট্রানশিপমেন্টে লাভ। আর এই ধরনের বিশ্লেষণ এখনো হয়নি। আসলে চুক্তি ব্যবসাবন্ধব হতে হবে। যারা আমদানি-রপ্তানি করে তাদের কোনটিতে লাভ বেশি ট্রানজিট না ট্রানশিপমেন্টে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ হবে। কেননা সম্পূর্ণ বিষয়টি ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করবে। কারণ ব্যবসাটা মূলত তারাই করে থাকেন। সরকার এখানে নীতিগত সিদ্ধান্ত ও সহযোগিতা করে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন