শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিমাসে বাল্যবিয়ে ২৮৮ জনের

প্রতিমাসে বাল্যবিয়ে ২৮৮ জনের

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৫ জন কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ের খবর প্রকাশ হলেও মাঠ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক গত ৮ মাসে ২৮টি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২ হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ে হয়েছে, প্রতিমাসে গড়ে ২৮৮ জন। ২০২২ সালের প্রথম ৮ মাসে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩ জন কন্যাশিশু, এর মধ্যে যৌতুক প্রদান করতে না পারায় ৫ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও এডুকো বাংলাদেশ।

গতকাল শুক্রবার বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সাংবাদিক সম্মেলন এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।   

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন পত্রিকা থেকে শূন্য থেকে ১৯ বছরের কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা উপস্থাপন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের স¤পাদক নাছিমা আক্তার জলি। উপস্থিত ছিলেন এডুকো বাংলাদেশের চাইল্ড রাইটস প্রটেকশন ¯েপশালিস্ট মো. শহীদুল ইসলাম, গুডনেইবারস বাংলাদেশের এডুকেশন এন্ড হেলথ ইউনিটের হেড রাজিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ ওয়াইডব্লিউসিএর জাতীয় সাধারণ স¤পাদক হেলেন মনিষা সরকার এবং জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী আহসানা জামান এ্যানী।     

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের প্রথম আট মাসে মোট ৭৬ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে একজন বিশেষ শিশুও রয়েছে। এ নির্যাতনগুলোর অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে রাস্তায়, নিজের বাসায়, নিকটতম আত্মীয়-পরিজন ও গৃহকর্তার দ্বারা। যৌন নির্যাতনে একটি অপেক্ষাকৃত নতুন ধরন হচ্ছে, পর্নোগ্রাফি। সাথে বাড়ছে আরও নানা ধরনের সাইবার অপরাধ। তথ্য মতে, ২০২২ সালের প্রথম আট মাসে পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ১৫ জন কন্যাশিশু। এ সময়কালে অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৩ জন কন্যাশিশু, অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ১৩৬ জন কন্যাশিশু।

আরও পড়ুনঃ  সীমান্তে অবৈধ পারাপারে দুই দালালসহ গ্রেপ্তার ২২

নাছিমা আক্তার জলি বলেন, এ সময়কালে মোট ৫৭৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৩৬৪ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ৮৪ জন কন্যাশিশু, প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু ৪৩ জন। এই আট মাসে ১৫টি গৃহশ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে; এর মধ্যে দুইজনকে হত্যা করা হয় ও একজন আত্মহত্যা করে। ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ১৮১ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে।

তথ্য অনুযায়ী, প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়ে ৪৬ জন এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে মনোমালিন্যের কারণে ৩৫ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। এ সময়কালে আত্মহত্যা করেছে ১৮৬ জন কন্যাশিশু। এছাড়া এ সময়কালে ৮ জন কন্যাশিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কন্যাশিশুর উপর নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে, প্রকট হচ্ছে। এটা একটা ব্যাধি। এই ব্যাধির প্রতিকার ও প্রতিরোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কন্যাশিশুর ভবিষ্যৎই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তাই কন্যাশিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে না পারলে বাংলাদেশের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা যাবে না। পাশাপাশি কন্যাশিশুর মায়েদের অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তন ও তাদের বঞ্চনার অবসানেও কাজ করতে হবে।  

হেলেন মনিষা সরকার বলেন, আজকাল মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা অনেক তথ্য সহজে পেয়ে যাচ্ছি, কিন্তু এসব তথ্য কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে? আমরা কি মানুষ হিসেবে উন্নত হচ্ছি না কি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছি। 

শহীদুল ইসলাম বলেন, কন্যাশিশুদের জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা দরকার। এক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মীদের আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন