শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আতঙ্কের শহর বগুড়া--

বিরতিহীন যাত্রায় ছিনতাই

বিরতিহীন যাত্রায় ছিনতাই

সন্ধ্যা হলেই আতঙ্ক। রাতে শুনশান এলাকায় একা হাটতে ভয় পান সাধারণ মানুষ। এ ভয় কথিত ভূত প্রেতে নয়, ভয় ছিনতাইয়ের। বগুড়া শহর যেন হয়ে উঠছে এক আতঙ্কের নাম। সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র মেতেছে এ নোংরা খেলায়। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অনেকটাই ক্ষুব্ধ হচ্ছেন সাধারণ নাগরিক। পুলিশ বলছেন, এ সব ঘটনা প্রতিহত করার জন্য সরব রয়েছে তারা, শুরু করেছে বিশেষ অভিযান।

বগুড়া শহরজুড়ে প্রায়ই ঘটছে ছিনতাই কাণ্ড। কখনও প্রকাশ্যে, কখনও গোপনে। ছিনতাইকারী কখনও আটক হয়, কখনও গণধোলাইয়ে ছাড় পায় আবার কখনো পালিয়ে বাঁচে। এই চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ। কষ্টার্জিত অর্থ নিয়ে বাড়িতে পৌছানোর পথে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে স্বর্বশান্ত হতে হয়। বিশেষ করে হেঁটে যাওয়া পথযাত্রীরা এই ছিনতাইয়ের শিকার বেশি হোন। বাদ যায় না রিক্সা বা মোটরসাইল আরোহীরাও। কিছু এলাকায় এই ছিনতাই কাণ্ড ঘটে শেষ রাতে। ক্রমশ বাড়ছে এই প্রবণতা।

ছিনতাইচক্রে অধিকাংশ সদস্য কিশোর বয়সী। সঙ্গদোষেই ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে তাদের জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তাদের মূল টার্গেট হল ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি এবং মোবাইল ব্যাংকিং কর্মীরা। এছাড়া বিদেশ ফেরত যাত্রীরাও রয়েছে তাদের টার্গেটে।  সম্প্রতি বৃন্দাবনপাড়া ও কালিতলায় এমন ৫টি ঘটনা আলোচনায় এসেছে। ঢাকা থেকে রিকসাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন দুই ভাই। মুখবাঁধা ৩ছিনতাইকারী কেড়ে নেয় দুইভাইয়ের টাকা ও ব্যবহৃত মোবাইল। তবে ছিনতাইকারীদের ১জন পালাতে ব্যর্থ হলে তাকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। এছাড়াও দত্তবাড়ী, উপশহর, খান্দার, ফুলতলা, ছিলিমপুর, নারুলীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন অসংখ্য ভুক্তভোগী। পালিয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ ছিনতাইকারীই। অধিকাংশ খোয়া যাচ্ছে ভুক্তভোগীদের নগদ অর্থ ও ব্যবহৃত মোবাইল। আলোচনায় আছে মোটর সাইকেল ও অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের ঘটনাও। সম্প্রতি নারুলী এলাকার হৃদয় ও জামিলনগর এলাকায় নাহিদকে চাপাতি ও বার্মিজচাকুসহ ছিনতাইকারী সন্দেহে আটক করে পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ  ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির ভবন থেকে পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

শুধু রাতেই নয়, জনসম্মুখে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম নিত্যদিনের ঘটনা। ফুটপাতে হাটতেও ভয় পান সাধারণ পথচারী। কোনো মহিলার ভ্যানিটিব্যাগ বা পুরুরেষ হাতে থাকা মোবাইলকে টার্গেট করে পিছু নেয় ছিনতাইকারীচক্র। সুযোগ বুঝে কৌশলে দৌড়ে পালায় কাঙ্খিত টাকা/মোবাইল নিয়ে। ধরা পড়লেও গণধোলাই খেয়ে যথারীতি আবারো শুরু করে একই কাণ্ড। আবার ছিনতাইকারীর একটি চক্র অভিনব কৌশন অবলম্বন করে পথচারীকে আটকায়। এতে ভুক্তভোগী বাধ্য হয়ে জনসম্মুখে নিজ থেকে সব বের করে দেয় ছিনতাইকারীকে।

শহরে নিয়মিত যাতায়াতকারী চন্ডিহারার সোহাগ আহম্মেদ বলেন, ‘কিছুদিন পূর্বে শহরে ফুটপাত দিয়ে সাতমাথায় যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি লোক কনুই দিয়ে আঘাত করে পাশকাটিয়ে যায়। এরপর পিছন থেকে ডেকে আমার নাম পরিচয় জানতে চায়। লোকটির হাতে অপারেশন করা আছে জানিয়ে আমাকে ব্লাক মেইল করতে থাকে। বিষয়টি স্থানীয় দোকানী বুঝতে পেরে ওই ছিনতাইকারীকে গালাগালি করে। ছিনতাইকারী ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে ওই দোকানী আমাকে ডেকে সতর্ক করে।’

এদিকে ছিনতাইকারীরা নিজেদের দ্বন্দ্বেও জড়ছেন। সম্প্রতি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যা মামলার আসামি আখের উদ্দিনকে (৩৮) ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে তাঁরই বন্ধু বাচ্চু মিয়া ওরফে কালা মানিক (৫৫)। বগুড়ার সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া সিদ্দিকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বাচ্চু মিয়া স্বীকার করেন গত ১৫ সেপ্টেম্বর।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন বলেন, ‘দ্রব্যমুল্যে উর্ধ্বগতি ও বেকার সমস্যার কারণে সম্ভবত ছিনতাইকারী বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে এরকম অন্যায়ে জড়াবে না কেউ। প্রশাসন মজবুত থাকলে বগুড়া শহর ছিনতাইমুক্ত হতে পারে।’

আরও পড়ুনঃ  শৃঙ্খলা ফেরাতে মহাসড়কে মহড়া

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) জানান, বগুড়ায় ছিনতাই রোধে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। নিয়মিত ছিনতাইকারী ধরে মামলা ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। পুজো উপলক্ষ্যে শক্ত অবস্থানে রয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

সংবাদটি শেয়ার করুন