লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বহুল আলোচিত দহগ্রাম ইউনিয়নে গত বছরের তিস্তার আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ৫টি সেতু ও ১০টি আঞ্চলিক সড়ক গত একবছরে মেরামত না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে এ ইউনিয়নের প্রায় ১৬ হাজার বাসিন্দা। যেন দেখার কেউ নেই।
দেশের বহুল আলোচিত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ইউনিয়নটি দেশের মূলভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ও ভারতের অভ্যন্তরে হওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও সড়কে দেশের মূলভূখণ্ডে চলাচল করতে পারছেন না সাধারণ মানুষেরা।
গত বছর ভারতের উজানের ঢলে তিস্তা নদী প্রবল স্রোতে দহগ্রাম ইউনিয়নে বন্যা ভয়ংকররুপ ধারণ করে। প্রায় দুই তৃতীয়াংশ এলাকা প্লাবিত হয়। ভেঙে যায় ফসলি জমি, চলাচলের সড়ক, সেতু ও বৈদ্যুতিক একাধিক খুঁটি।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, মূলত দহগ্রাম ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে সাকোয়া নদী বয়ে যাওয়ায় ইউনিয়নটি দুই ভাগে বিভক্ত। অপরদিকে পূর্ব-পশ্চিমে ভারত-বাংলাদেশ লাগোয়া অংশ হয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা নদী। প্রতিবছর তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে দহগ্রামের অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়। সাকোয়া নদী ভারতের মেখলিগঞ্জ হতে দহগ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত।
তিস্তায় বন্যা দেখা দিলে সাকোয়া নদীও রুদ্র মূর্তি ধারণ করে। সেতু ও আঞ্চলিক পাকা-কাঁচা সড়ক ভেঙে যায়। গতবছরে হওয়া আকস্মিক বন্যায় দহগ্রামের ১নং ওয়ার্ডের সৃষ্টিয়ারপাড় এলাকার সাকোয়া নদীর উপর নির্মিত সেতুর দুই দিকের সংযোগ সড়ক ধ্বসে গেছে। একই ওয়ার্ডের সর্দারপাড়া তিস্তা নদীর ক্যানেলের উপর নির্মিত সেতুর দুই দিকে ফাটল ধরেছে। ঝুকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে মানুষ। একই ওয়ার্ডের কলোনীপাড়া হতে দাখিল মাদরাসাগামী ৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২নং ওয়ার্ডের ওলেরপাড়, ডাঙাপাড়া এলাকা হয়ে শেষ পর্যন্ত (ভারত-বাংলাদেশ শূণ্য রেখা পর্যন্ত) সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নষ্ট হয়ে গেছে। ৪নং ওয়ার্ডের পশ্চিমবাড়ী মহিমপাড়া এলাকার কালভার্ট ভেঙে গেছে। দহগ্রামের নয়ারহাটগামী পাকা রাস্তা থেকে গুচ্ছগ্রামে যাওয়ার দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি বৃষ্টি, বন্যা, খড়া/শুষ্ক সব মৌসুমে চলাচলে অনুপযোগী। বৃষ্টি আর বন্যায় সড়কটির অনন্ত ৮-১০ জায়গায় ভেঙে গেছে। সড়কে কালভার্টটিও ভেঙে গেছে, সেতুর সংযোগ সড়ক ধ্বসে যাওয়ায় বেশ কষ্টে চলাচল করে এখানকার বাসিন্দারা। ৪ ও ৬নং ওয়ার্ডের বঙ্গেরবাড়ী হতে নতুনহাট এলাকায় সাকোয়া নদীর উপর নির্মিত সেতুটির রেলিং ভেঙে গেছে। ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের উত্তর দিকের সংযুক্ত পাকা সড়কও ভেঙে গেছে। ৮নং ওয়ার্ডের হাড়িপাড়া-সৈয়দপাড়া সাকোয়া উত্তরদিকের অংশ দেবে গেছে। এ ওয়ার্ডের সৈয়দপাড়া থেকে হাবিব চেয়ারম্যানের বাড়ি পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়কে বন্যা, বৃষ্টিতে গর্ত ও নষ্ট হয়েছে। ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড সংযুক্ত এলাকার কাজীপাড়া-মমিনপুর মাদ্রাসা এলাকার সাকোয়া নদীর উপর সেতুটির দুই দিকের সংযোগ সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অচলাবস্থায় রয়েছে। ৯নং ওয়ার্ডের কাতিপাড়া থেকে মতিয়ারের বাড়ি পর্যন্ত কাবিখার সড়ক দেবে গেছে।
দহগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা রব্বু মিয়া (৩৫) বলেন, দহগ্রাম ইউনিয়নের অনেক সড়ক তিস্তা নদীর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু সেতু নষ্ট হয়েছে, সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। গত এক বছর ধরে সড়ক সেতু নির্মাণ না হয় আমরা অনেক মানুষ কষ্টে চলাচল করছি।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম রব্বানী বলেন, প্রতিবছর তিস্তার আকস্মিক বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়ে দহগ্রাম ইউনিয়নের হাজারও কৃষক। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তা ঘাট, ব্রিজ ফসলি জমি। তাই অত্র ইউনিয়নের কথা চিন্তা করে দ্রুত রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট মেরামতের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী মাহাবুব-উল আলম বলেন, গত বছরের আকিস্মক বন্যায় দহগ্রাম ইউনিয়নের যে সকল সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামতের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।
দহগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, বন্যায় এ ইউনিয়নের পাকা ও কাঁচা রাস্তা এবং সেতু, কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সড়ক ও সেতু সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন, জেলা প্রশাসক, প্রকৌশলীসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো কাজ হচ্ছে না।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, এ অর্থবছরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামত করা হবে। ব্রিজ কালভার্টগুলো এলজিইডি করবেন। পর্যাক্রমে দহগ্রাম ইউনিয়নে অবকাঠামো সংস্কার করা হবে।
