শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকল্পের কচ্ছপগতি

মেয়াদ শেষেও হয়নি সেতু

মেয়াদ শেষেও হয়নি সেতু

খেয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় থমকে গেছে স্থানীয় অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মান উন্নয়ন

২ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ১২৫ টাকায় কাজটির দায়িত্বপায় বরিশালের মেসার্স লী কনষ্ট্রাকশন-মান (জেভি)। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ২৬ জুলাই। এখনও ব্রিজটির নির্মাণ কাজ অধিকাংশই বাকি রয়েছে

গত ৩ বছরেও শেষ হয়নি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মান্নান গাছির খেয়া ঘাট এলাকায় ৬০ মিটার দৈর্ঘের সেতু নির্মাণ কাজ। ফলে ওই অঞ্চলের মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় থমকে গেছে স্থানীয় অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মান উন্নয়ন। সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বৃহত্তর ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলার সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে।

বর্তমানে ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে ছোট একটা খেয়া নৌকাতে ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা নদীর খাল পারাপার হচ্ছেন। এতে যেমন জীবনের ঝুঁকি রয়েছে পাশাপাশি কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের  হাজার হাজার সাধারন জনগণ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মান্নান গাছীর খেয়াঘাট দিয়ে রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার ওই এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করেন। খেয়াঘাটের দুই পাশের একাধিক হাট-বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া এসব অঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য নিয়মিত ফরিদপুর জেলা শহরে যাতায়াত করে থাকেন। দ্রুত ও স্বল্প সময়ে যাতায়াতের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ এ ঘাট ব্যবহার করে থাকেন। সেতু না থাকায় তাদের পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। ভূক্তভোগীদের দাবি দ্রুত শেষ করা হোক সেতু নির্মাণের কাজ।

আরও পড়ুনঃ  শীতের থাবা শুঁটকিপল্লীতে

গোয়ালন্দ উপজেলা এলজিইডি সূত্র জানায়, বরিশালের মেসার্স লী কনষ্ট্রাকশন-মান (জেভি) ২ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ১২৫ টাকার কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত হয়েছেন। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কাজটির উদ্বোধন করা হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ২৬ জুলাই। তবে, এখন পর্যন্ত ব্রিজটির নির্মাণ কাজ অধিকাংশই বাকি রয়েছে। বর্তমানে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার একজন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, আনন্দবাজার এলাকায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় উজানচর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর দাখিল মাদ্রাসা, সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামতলা হাইস্কুলে আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য প্রতিদিন নানা ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। 

গোয়ালন্দ উজানচর ইউনিয়নের সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া গ্রামের মোতালেব শেখ, আ. রব খান, আবুল হাসেম মন্ডলসহ কয়েকজন বলেন, দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এ খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন। নদীর উপর ব্রিজ না থাকায় কৃষিপণ্য ও রোগী পরিবহন এবং সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে অনেক পথ ঘুরতে হয়। এতে করে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।

মান্নান গাছির খেয়া ঘাটের নৌকার মাঝি আ. সাত্তার খাঁ বলেন, নৌকায় শুধু মানুষ যাতায়াত করে। ভারি কোনো পণ্য নেওয়া সম্ভব না। রাতে নৌকা দিয়ে পারাপার করে জরুরি রোগি হাসাপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়।

উজানচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা জানান, ব্রিজটি নির্মাণ কাজ বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। আমি ইঞ্জিনিয়ারসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

আরও পড়ুনঃ  অসাধারণ সাফল্যে তৃতীয়বারের জয় টিউলিপের

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান জানান, কাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে ঠিকাদারকে কয়েক দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ আগষ্ট একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় দেয়া হয়েছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় ঠিকাদারকে সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে আমাদের নজরদারি রয়েছে।

এদিকে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে থাকা এবং যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমানের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।  গত ৩০ আগষ্ট গোয়ালন্দ উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন