ঢাকা | সোমবার
১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্ধকার থেকে আলোয়

অন্ধকার থেকে আলোয়

উন্মুক্ত কারাগার হবে বন্দিদের জন্য সংশোধানাগার

মনির হোসেন, ডেপুটি জেলার

উন্নত বিশ্বের আদলে কক্সবাজারের উখিয়া, হলদিয়া পালং এর পাগলির বিল নামক স্থানে হচ্ছে দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার। জেলা কারাগারের উপর চাপ কমাতে বর্তমান সরকার এ যুগান্তকারি পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও জনপ্রতিনিধিরা।

জেলা কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ কারাগার ১৬০ একর জমির উপর থাকবে একাধিক বহুতল ভবন। প্রথম ধাপে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে চলছে সীমানা প্রাচীর চিহ্নিত করণের কাজ। আগামী তিন বছেরর মধ্যে উন্মুক্ত কারাগারের পরিপূর্ণ কাজ সমাপ্ত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। এখানে থাকবে দৃষ্টিনন্দন ফুলে-ফলে সজ্জিত বাগান, কুঠির শিল্প, ক্ষেত-খামার, খেলাধুলা, পড়ালেখাসহ জীবনঘনিষ্ঠ নানা কার্যক্রম। বন্দিরা থাকবে না শৃঙ্খলে।

প্রয়োজনে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে পরিবার পরিজনের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করে আবার ফিরতে পারবেন কারাগারে। উন্মুক্ত কারাগারে ক্ষেত খামার ও কুঠিরশিল্পে কাজ করার উপর বন্দিরা পাবেন পারিশ্রমিক। যা দিয়ে বন্দিরা পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণ মেটাত সক্ষম হবেন। এমনটাই জানালেন কক্সবাজারের জেল সুপার মোহাম্মদ শাহ আলম খাঁন।

এ দিকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে ৮৫০ জনের ধারণ ক্ষমতা। সেখানে বর্তমানে হাজতি কয়েদির সংখ্যা হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। এতে রোহিঙ্গা রয়েছে ১ হাজার ১৬৬ জন। আর মায়ানমারের নাগরিক আছে ১৩৪ জন। কারারক্ষি ১০১ জন, সহকারি এসিস্ট্যান্ট প্রধান কারারক্ষী ১০জন, প্রধান কারারক্ষি ৩জন, সুবেদার ২, ডেপুটি জেলার একজন, মহিলা কারারক্ষি ১০, ডাক্তার ২, ফার্মাসিস্ট এক ও জেল সুপার আছেন একজন।

জেলার মোস্তফা কামাল জানান, ধারণ ক্ষমতার পাঁচগুণের বেশি হাজতী কয়েদীদের সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তাই উন্মুক্ত কারাগার নির্মিত হলে চাপ কমবে বহুলাংশে। শুধু তাই নয়, বন্দিরা পাবে কাঙ্ক্সিত সেবা।

ডেপুটি জেলার মনির হোসেন বলেন, জেলা কারগারে সেবার মান অতীতের যেন সময়ের চাইতে এখন অনেক ভালো। তারপর ও উন্মুক্ত কারাগার হবে বন্দিদের জন্য অন্যতম সংশোধানাগার।

সম্প্রতি কারগার থেকে ৫ বছর অস্ত্র মামলায় সাজাভোগের পর বেরিয়ে আসা মহেশখালীর মিজানুর রহমান বলেন, প্রথমে দুই বছর অনেক কষ্ট পেয়েছি। খাবারমান থাকার জায়গার সাংঘাতিক সমস্যা ছিল। এরপর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। বিশেষ করে নতুন ভবন হওয়ার পর থাকার তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। খাবার তালিকায় আগে ছিল সকালে গুড়-রুটি আর এখন, ডালরুটি বা রুটি হলুয়া দেয়া হচ্ছে।

টেকনাফের নুর হোসেন একটি হত্যা মামলা থেকে ৬ মাস পর জামিনে বেরিয়ে আসেন গত ২৫ আগস্ট। তিনি জানান, জেলে আমি আগে ও ছিলাম। এখন জেলে থেকে হাজতি কয়েদিরা যে সুবিধা ভোগ করছেন তা আগে কখনো পায়নি। এখন সপ্তাহে একদিন আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের পাশাপাশি প্রতিমিনিট এক টাকায় সর্বোচ্চ ১০ মিনিট মোবাইলে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। তাছাড়া চিকিৎসাসেবা অতীতের যে কোনো সময়ের চাইতে উন্নত। কারাকর্তৃপক্ষ অনেক মানবিক আচরণ করেন। ফলে সব মিলিয়ে জেলখানার পরিবেশ পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো। এর বাইরে কারা পরিদর্শকগণ মাঝেমধ্যে কারাগারের ভেতরকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। খোঁজ খবর নিচ্ছেন বন্দিদের।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, উন্মুক্ত কারাগার তৈরি হলে বন্দিরা পবেন আরও পরিচ্ছন্ন পরিবেশের ছোঁয়া এবং আত্মাশুদ্ধিকরণের সুযোগ।

কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজারবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হচ্ছে এ উন্মুক্ত কারাগার। এখানে সব বয়সি মানুষ বা কারাবন্দি উন্মুক্ত কারাগারে ঠাঁই পাবেন। তবে বয়োবৃদ্ধ, শিশু ও সাজাভোগের শেষ প্রান্তে আসা বন্দিরা অগ্রাধিকার পাবেন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন