বৃহস্পতিবার, ২৫শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আড়িয়াল খাঁয় আতঙ্ক

আড়িয়াল খাঁয় আতঙ্ক

বিলীন বসত বাড়ি, পাড়ের বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায়

মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের গর্ভে কালকিনি উপজেলার সাবেক ইউপি সদস্যর বাড়িসহ প্রায় দুইশতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙন কবলিত মানুষ। ইতোমধ্যে কয়েকশত একর বিভিন্ন প্রকার ফসলি জমি ও নদী গর্ভে চলে গেছে। এদিকে নতুন করে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদীর পাড়ের প্রায় শতাধিক পরিবার, বাজার, মসজিদ ও বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। যে কোনো সময় রাক্ষুসী আড়িয়াল খাঁ নিয়ে যেতে পারে তাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি। এদিকে অনেকে বসতবাড়ি ভেঙে নিয়ে অন্যস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। অপরদিকে নদী ভাঙনের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিংকি সাহা, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের, ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহিম মুরাদ ও ইউপি তহশিলদার রেবেকা সুলতানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

সরেজমিন ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রত্যন্তঞ্চল সাহেবরামপুর এলাকার পূর্ব সাহেবরামপুর লঞ্চঘাট ও নতুন আন্ডারচর গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদ। বছরের পর বছর আড়িয়াল খাঁর তান্ডবে বিলিন হয়ে গেছে হাজারো বাড়িঘর। চলতি বছর নতুন করে আড়িয়াল খাঁ নদে গর্ভে চলে গেছে পূর্ব সাহেবরামপুর গ্রামের হিরন সরদার, সাহাদাত সরদার, জালাল সরদার, মজিবর বেপারী, আক্কাস আকন, মোয়াজ্জেম ফকির, শিরাজ ফকির, মোশারফ সরদার, শাহাবুদ্দিন সরদার ও সাবেক ইউপি সদস্য আদেল বেপারীর বসতঘরসহ প্রায় শতাধিক বাড়িঘর। এ ছাড়া নতুন করে বর্তমানে ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে আলী সরদার, সবুজ সরদার, লতীফ সরদার, শাহীন সরদার, সজীব বেপারী, সুলতান বেপারী, স্বপন বেপারী, কালাম বেপারী, মন্টু সরদার, বাদশা হাওলাদার, আলিম সরদার, শাহাদাত সরদার, আজিজুল ফকির ও সোহাগ ফকিরসহ শতাধিক বাড়িঘর।

আরও পড়ুনঃ  কুড়িগ্রামে হুঁ হুঁ করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি

অপরদিকে বর্তমানে নূতন আন্ডারচর গ্রামের চানমিয়া সরদার, বজলু সরদার, কামাল হাওলাদার, বিউটি বেগম, হাচিনা বেগম ও দাদন সরদারের বাড়িঘর আড়িয়াল খাঁ নদে বিলিন হয়ে গেছে। নদী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নতুন আন্ডারচর বঙ্গবন্ধু কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নবারুন উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাঙন কবলিত মানুষ তাদের ভিটামাটি হারিয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাদিকুর রহমান ও হাচিনা বেগমসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে আমাদের পুরো গ্রাম নদীর পেটে চলে যাবে।

আন্ডারচর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদ বিগতদিনে হাজারো বসতবাড়ি কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করা হলে বাকি ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনমতে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

সাহেবরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহিম মুরাদ সরদার বলেন, বর্তমানে আড়িয়াল নদে পূর্ব সাহেবরামপুর গ্রাম ও লঞ্চঘাট এলাকার প্রায় ১৫ একর ফসলি জমি, এবং দুই শতাধিক বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে নতুন করে দেড় কিলোমিটার এলাকারজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।

মাদারীপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের বলেন, নদী ভাঙনরোধে কাজ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিংকি সাহা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এবং ভাঙন ঠেকাতে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন