শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চট্টগ্রাম শহর---

যানজট-জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি

যানজট-জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি

একটুখানি বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম শহরের অনেক জায়গা, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় প্রায় নগরজুড়ে।নগরীর আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর, গোসাইলডাঙ্গা, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, জিইসি মোড়, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় একটু বৃষ্টিতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ওঠে।  দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ চাকতাই এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য বর্ষা মৌসুম এক অভিশাপের নাম। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বাকলিয়া মৌসুমি আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা বর্ষায় জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুদ্ধ করেই মৌসুম পার করে।

সরজমিনে দেখা যায়, ৩৫নং ওয়ার্ডে বাস্তহারা সড়ক শহীদ এন.এন.এম জে বাকলিয়া কলেজের সামনে জলাবদ্ধতার দৃশ্য যেন প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণকে। এটি নিত্যদিনের ঘটনা। একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। যেন দেখার কেউ নেই। জনসাধারণের অভিযোগ, বাস্তহারা গলি মুখে প্রতিদিন লেগে থাকে যানজট, অবৈধ অটোরিকশা ও গ্রাম সিএনজি স্টেশন। ফলে জনসাধারণ ও ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের অসুবিধা হয়। স্থানীয়রা বলছেন কাউন্সিলর হাজী নুরুল হককে অনেক বার বলেছেন জলাবদ্ধতা নিয়ে। সিটি কর্পোরেশনের ২-৩ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে নালা পরিস্কার করে যায় তারা। আবারও একই অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। বিশেষ করে ওই জায়গাটা নিচু হওয়ায় পাচ্ছে না তারা কোন প্রকার সুফল।

এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিল হাজী নুরুল হক মেগা প্রকল্পকে দায়ি করেন। যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় রাজনৈতিক নেতারা অবৈধ গাড়ির স্টেশন করেছে যা সম্পন্ন বেইআইনি। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি আছে। একার পক্ষে অবৈধ গাড়ির স্টেশন উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। যানজট প্রসঙ্গ নিয়ে বাকলিয়া থানার টিআই মুকিতের সঙ্গে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাকলিয়া কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মালেক স্যার আমাকে জানিয়েছেন সড়কের যানজটের বিষয়ে। আমি তৎক্ষণাৎ নিজে এসে রাস্তা ক্লিয়ার করে দেই। তিনি আরও বলেন গাড়ির সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি আমরা ও ট্রু করছি। অটোরিকশার ও গ্রাম সিএনজি স্টেশন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে চলেন।

আরও পড়ুনঃ  ৭১২ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে, মৃত্যু ৩

বাকলিয়া শহীদ এন.এম.এম.জে ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মালেক বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী বিষয়গুলো সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানি, বুঝি, এমনকি নিয়মিত দেখিও। তবে কারও মধ্যে সচেতনতা কাজ করে না। ফলে দেখা যায় এখনো মানুষ ঘরের জানালা দিয়ে পলিথিনের ব্যাগে করে রাতের আঁধারে ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে, যেগুলো গিয়ে স্থান নেয় কোনো একটি পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ কিংবা নালার মুখে।

এতে পানি নিঃসরণের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা। জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পেছনে আরেক অভিশাপ বলা যেতে পারে নির্মাণাধীন ভবনগুলো থেকে তৈরি উপজাতগুলোকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভবন তৈরির কাঁচামাল এনে জড়ো করা হয় রাস্তার উপর। দেখা গেছে বিগত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমল থেকে সর্বশেষ মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী পর্যন্ত প্রায় তিন দশক ধরে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি ইস্যু হিসেবে আছে। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৭ বছর, বিএনপি থেকে নির্বাচিত এম মনজুর আলম ৫ বছর, আবার আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের ২৭ বছরে চাকতাই খাল খনন, তলা পাকাকরণ প্রকল্প থেকে শুরু করে জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত নানা প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে এর সুফল নগরবাসী পায়নি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকল্পটির কাজ চলছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল প্রকল্পটির কাজ। এরপরও কাজ শেষ না হওয়ায় এক বছর সময় বাড়িয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয় প্রকল্পের মেয়াদ। বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় আরও দুই বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। বলা যায় না এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয় আরও কত বাড়বে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন