শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিষিদ্ধ ইজিবাইকের স্টিয়ারিংয়ে শিশুরা

নিষিদ্ধ ইজিবাইকের স্টিয়ারিংয়ে শিশুরা

চট্টগ্রামে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু কিশোর‘রা প্রকাশ্যে শহর এবং আশেপাশের এলাকায় বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছে নিষিদ্ধ তিন চাকার ইজিবাইক। অদক্ষ শিশুরা যান্ত্রিক যান চালনায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ার পাশপাশি শিশুশ্রম আইনও লঙ্ঘিত হচ্ছে।

নিষিদ্ধ এসব অটোবাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য ৪ থেকে ৫টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে ৫ থেকে ৬ ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসেবে জেলার প্রায় ৫০ হাজার ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫৫ মেগাওয়াট এবং মাসে ১ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হওয়ার কথা।

তবে, ৮০ ভাগ গ্যারেজে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এ সব ব্যাটারি রিচার্জ করায় সরকার প্রায় ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে ভাড়া অন্যান্য যানের চেয়ে তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে মূল শহরে এবং তার বাইরে এখন যাত্রীদের প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা। আর এগুলোর বেশির ভাগ চালকই সামান্য অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে বৈদ্যুতিক লাইন থেকে গাড়িগুলোতে চার্জ করিয়ে নিচ্ছেন। তারা এই গাড়িগুলো যে গ্যারেজে রাখছেন সে জায়গা থেকেই রাতভর একটি গাড়ির শুধু চার্জের জন্য গ্যারেজ মালিককে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে দিচ্ছেন।

আরও পড়ুনঃ  গাজীপুরে গণপরিবহন সংকটে ভোগান্তি

এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অনেক বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। যে কারণে গ্যারেজ মালিকরা খরচ কমিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে থাকে।

ব্যাটারি চালিত এক রিকশা চালক মনিরুল ইসলাম জানান, সকাল হলেই রিকশা নিয়ে মহাসড়কে বের হতে হয়। তিনি বলেন, আমি আর অন্যকোনো কাজ জানি না। তাই রিকশা নিয়েই বের হতে হয়।

মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, সেটা আমরা যারা রিকশা চালাই তারা সকলেই জানি। তবে মাঝে মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ ধরে ফেলে। তখন বাধ্য হয়েই টাকা দিয়ে ছাড়াতে হয়। কত টাকা দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল জানায়, কখনও দুই হাজার, আবার কখনও এক হাজার টাকা দিলেই হয়।

এ বিষয়ে বাকলিয়া ট্রাফিক বিভাগের টিএ মুকিত বলেন, আমাদের অভিযান চলমবে। কিছুক্ষণ আগেও তিনটা অটোরিকশা ও বেশ কিছু সিএনজি আটক করেছি। আমরা চেষ্টা করছি অচিরেই সুফল পাবে চট্টগ্রামবাসী।

বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার ট্রাফিক বিভাগের অক্সিজেন ট্রাফিক ইনচার্জ টিআই’র সঙ্গে অবৈধ নিষিদ্ধ অটোরিকশা ও গ্রাম সিএনজি নিয়ে কথা বললে তিনি প্রথমে এড়িয়ে যেতে চান। পরে তিনি জানান,  আমি এ এলাকায় কর্মরত আছি ৭ মাস। ব্যাটারি রিকশাগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের কারণে গাড়িগুলোকে আমরা মেইনরোডে উঠতে দেই না।

তিনি বলেন, এ বৃহত্তর এলাকা কন্ট্রোল করার মত জনবল বা আমাদের কাছে অতিরিক্ত ফোর্স না থাকায় যা আমাদের সাধ্যের মধ্যে নেই। আমি এখানে জয়েন করার পর থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ অবৈধ অটোরিকশা ও অবৈধ গ্রাম সিএনজি আটক করতে সক্ষম হই এবং এই অভিযান চলমান রয়েছে। ছিন্নমূল এলাকায় অটোরিকশার ব্যাপারে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে এবং ডেবার পাড়, জামতলা এবং লিংক রোডে রুটগুলোতে আমরা বিশেষ কোনো কাজে গেলে আমাদের চোখের সামনে অটোরিকশা পড়লে আমরা এ অটোরিকশার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমিসহ প্রাক্তণ টিআই মঞ্জুর ভাইয়ের পরে উক্ত  ফাঁড়িতে যোগদান করি। এখানে জনবল সংকট রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  হকার-ভিক্ষুকের দখলে ফুটওভার ব্রিজ

সাবেক কারা পরিদর্শক হাজী আবদুল মন্নান বলেন, অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক লোকদের হাতে এ দ্রুত যানটি তুলে দেয়ার কারণে প্রতিনিয়ত হচ্ছে দুর্ঘটনা। যারা এ অটোরিকশা পরিচালনা করছেন তাদের উচিত এ বিষয়টির উপর নজর দেয়া।

লায়ন আবু সালেহ নামে এক ব্যক্তি জানান, মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপরও মহাসড়কে অটোরিকশা উঠছে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এসব রিকশা অটোরিকশা ধরা হলেও চালকদের কাছ থেকে র‌্যাকার বিল রেখে আবার ছেড়েও দেয়া হয়।

তিনি জানান, মহাসড়কে চলাচলরত নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ধরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কিংবা তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করলে অনেকটাই কমে যেত। তারা মহাসড়কে উঠতে সাহস পেত না।

তবে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার পেছনে রয়েছেন পিডিবি‘র অসাধু কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম পিডিপির বিদ্যুৎ বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিমের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি জানান, ব্যাটারি রির্চাজের একটা আইন করা আছে। যদি গ্রাহক বৈধভাবে সংযোগ নিতে চাইলে তাতে কোন প্রকার বাধা নেই। অবৈধ লাইন কেউ যদি নিয়ে থাকে দ্রুত তিনি ব্যাবস্থা নিবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে যেখানে বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে সেখানে এই যানগুলোতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার বিদ্যুতের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। বিদ্যুৎ বিভাগের উচিত স্পেশাল টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এসব বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করা অথবা সরকারের বিশেষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অটোরিকশার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন