শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বে টার্মিনালে শতাব্দির স্বপ্ন

বে টার্মিনালে শতাব্দির স্বপ্ন

চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনালে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দুবাই পোর্ট (ডিপি) ওয়ার্ল্ড। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে ৫ গুণের বেশি বড় বে টার্মিনালে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ইকুইপমেন্ট সরবরাহ থেকে শুরু করে পরিচালনা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে দুবাই পোর্ট বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। দীর্ঘদিন ধরে তারা চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে নিজেদের অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে ঢাকায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে গত মঙ্গলবার সাক্ষাৎ করে বে টার্মিনালের ব্যাপারে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে দুবাই পোর্ট কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষ ৬৮ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি কিনে এবং সরকারের ৮৭১ একর খাস জায়গা বরাদ্দ নিয়ে বে টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করে কয়েক বছর আগে। এটি সরকারের একটি মেগা প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত প্রকল্পটি আগামী একশ বছরের বন্দরের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে হালিশহর সমুদ্র উপকূলে গড়ে তোলা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলে সাড়ে ৪শ একর ভূমিতে। এতে করে বে টার্মিনাল বন্দরের চেয়ে ৫ গুণের বেশি বড় এলাকায় পরিচালিত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ সাড়ে নয় মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং নিতে পারে। বে টার্মিনালে ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব। এখানে তিনটি টার্মিনাল থাকবে। প্রতিটি টার্মিনালে ৩০০ মিটার লম্বা ছয়টি জেটি থাকবে। একটি টার্মিনালে ১৮শ মিটার লম্বা জেটি এবং পশ্চাৎ সুবিধা গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি টার্মিনালে একই সাথে ছয়টি জাহাজ বার্থিং দেয়া যাবে। ২০২৪ সালে বে টার্মিনালে জাহাজ ভিড়ানোর লক্ষ্য আছে।

মূলত, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশে শত বছরের বন্দরের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে হালিশহর সমুদ্র উপকূলে গড়ে তোলা হচ্ছে বে টার্মিনাল। উপকূলের কাছাকাছি জেগে ওঠা একটি চরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট প্রাকৃতিক চ্যানেলে বন্দরটি গড়ে তোলা হবে। অবশ্য এজন্য বঙ্গোপসাগরে ব্রেকওয়াটার নির্মাণ এবং প্রাকৃতিক চ্যানেলটিকে খনন করে গভীরতা বাড়াতে হবে। শুরুতে ৯৩৯ একর ভূমিতে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হলেও ক্রমে তা আড়াই হাজার একরে উন্নীত হবে।

আরও পড়ুনঃ  `বিশ্বে দাম বাড়লে আমাদেরও বাড়বে, কিছু করার নেই'

বন্দর কর্তৃপক্ষ ৬৮ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি কিনে এবং সরকারের ৮৭১ একর খাস জায়গা বরাদ্দ নিয়ে বে টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করে কয়েক বছর আগে। এটি সরকারের একটি মেগা প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত প্রকল্পটি বিভিন্ন সময় নানা জটিলতায় পড়েছে। বিশেষ করে খাস জমি বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতায় প্রকল্পটির কার্যক্রম ব্যাহত করেছে।

ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি প্রতিষ্ঠান কুনহোয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসাল্টিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ডি ওয়াই ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে যৌথভাবে বে টার্মিনালের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৬ টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান দুটি বে টার্মিনাল নির্মাণে ডিজাইন, ড্রয়িং ও টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরি থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রমে পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ব্যাপারটি অনুমোদন দিয়েছে। এতে প্রকল্পটির কার্যক্রমে গতি এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

প্রকল্পটির বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। ডিপি ওয়ার্ল্ড বে টার্মিনালের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম এবং সমন্বিত লজিস্টিক সাপোর্টের বিষয়ে বিনিয়োগের ব্যাপারেও তাদের আগ্রহের কথা জানায়। বন্দর, কার্গো ও লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুবাই পোর্ট (ডিপি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছে। এরই অংশ হিসেবে তারা চট্টগ্রামেও বিনিয়োগ করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে তৎপরতা চালাচ্ছে।

দুবাই পোর্ট (ডিপি) ওয়ার্ল্ডের ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিজওয়ান সুমার নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। ডিপি ওয়ার্ল্ডের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে। তারা ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো (আইসিডি) ও মেরিটাইম খাতেও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এসময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, ডিপি ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষের ভারতীয় উপমহাদেশের পরিচালক (বাণিজ্যিক ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) কেভিন ডি’সুজা, বাংলাদেশ ডিপি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীমুল হক এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন