শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গম উৎপাদনে হাজার কোটি টাকার পুঃন অর্থায়ন!

গম উৎপাদনে হাজার কোটি টাকার পুঃন অর্থায়ন!

দেশে গম ও ভুট্টা উৎপাদন বাড়াতে এক হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়।

এসিডির পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত সার্কুলারে বলা হয়, দেশে গম ও ভুট্টার পর্যাপ্ত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদনের পরিমাণ যথেষ্ট নয়। গম ও ভুট্টা হতে উৎপাদিত খাদ্য দ্রব্যাদির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রতিবছর গম ও ভুট্টা আমদানি করতে হয়। এতে উল্লেখযােগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। যে কারণে দেশে গম ও ভুট্টা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এক হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যার পুরোটাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। স্কিমের মেয়াদ দেয়া হয়েছে ৩০ জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তবে প্রয়ােজনে মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে।

পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ঋণ চুক্তি সম্পাদন ও তহবিল বরাদ্দ পেতে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতাভুক্ত ব্যাংকসমূহের মধ্যে ইচ্ছুক

ব্যাংকসমূহকে কৃষি ঋণ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়ের সাথে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদনকারী ব্যাংকসমূহের অর্থবছর ভিত্তিক চাহিদার ভিত্তিতে উক্ত ব্যাংকসমূহের অনুকূলে তহবিল বরাদ্দ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়ােজনের নিরিখে বরাদ্দের পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর পেশকৃত পুনঃঅর্থায়ন দাবী পর্যালােচনাপূর্বক পর্যায়ক্রমে বরাদ্দকৃত তহবিলের সমপরিমাণ পুনঃঅর্থায়ন করা হবে।

এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহকে নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরাসরি কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। গম ও ভুট্টা চাষের উপযােগী অঞ্চলসমূহে এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় উল্লেখিত গম ও ভুট্টা চাষের ঋণ নিয়মাচার অনুযায়ী ব্যাংকসমূহ কৃষকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।

আরও পড়ুনঃ  রপ্তানি বাণিজ্যে চমক

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা’র ৬.১৯.৬ অনুচ্ছেদে সংজ্ঞায়িত ভূমিহীন কৃষক (যাদের জমির পরিমাণ ০.৪৯৪ একরের কম), ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক (যাদের জমির পরিমাণ ০.৪৯৪ একর থেকে ২.৪৭ একর) এবং বর্গাচাষিদেরকে এ স্কিমের আওতায় এককভাবে জামানত বিহীন (শুধুমাত্র ফসল দায়বন্ধনের বিপরীতে) সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা যাবে। অন্যান্য কৃষকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রয়ােজনীয় যাচাই-বাছাইপূর্বক ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক এ স্কিমের আওতায় বিতরণ করতে পারবে। এ স্কিমের আওতায় গৃহীত ঋণ দ্বারা কোনভাবেই পুরাতন ঋণ সমন্বয় করা যাবে না। সিআইবি রিপাের্ট অনুযায়ী কোন কৃষক/গ্রাহক খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে এ স্কিমের আওতায় ঋণ প্রাপ্তির জন্য যােগ্য বিবেচিত হবে।

এ স্কিমের সুদ/মুনাফা হার সম্পর্কে সার্কুলারে হয়- এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক হতে নির্ধারিত ০.৫০ শতাংশ সুদ/মুনাফা হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। কৃষক পর্যায়ে সুদ/মুনাফা হার হবে সর্বোচ্চ ৪% (সরল হারে)।

ঋণের মেয়াদের তথ্য উল্লেখ করে সার্কুলারে বলা হয়, কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ফসল উৎপাদনের পঞ্জিকা ও ঋণ পরিশােধ সূচিতে উল্লিখিত গম ও ভুট্টা চাষের উৎপাদন পঞ্জিকা ও পরিশােধ সূচি অনুযায়ী কৃষক পর্যায়ে বিতরণকৃত ঋণের মেয়াদ নির্ধারিত হবে। অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহ পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ হতে অনধিক ৮ মাসের মধ্যে আসল এবং সুদ/মুনাফা (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ০.৫০% সুদ/মুনাফা হারে) পরিশােধ করবে।

পুনঃঅর্থায়ন আবেদন পদ্ধতি

কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ শুরু করার পর অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহকে মাসিক ভিত্তিতে পুনঃঅর্থায়নের অর্থ প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রয়ােজনীয় তথ্য/কাগজপত্রসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের পরিচালকের নিকট পুনঃঅর্থায়নের জন্য আবেদন করবে।

আরও পড়ুনঃ  'লকডাউনে দেশের ক্ষতি, সেদিকে যেতে চাই না'

পরিশাধ পদ্ধতি

ব্যাংকের অনুকূলে ছাড়কৃত অর্থের নির্ধারিত মেয়াদ পূর্তির মধ্যেই সুদ/মুনাফাসহ গৃহীত আসলের সমুদয় অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশােধ করতে হবে। কৃষক পর্যায়ে বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের সকল দায়-দায়িত্ব ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত থাকবে। কৃষক পর্যায়ে ঋণ আদায়ের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওনাকে সম্পর্কিত করা যাবে না। ঋণের বকেয়া নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে পরিশােধিত না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব বিকলন করে তা আদায়/সমন্বয় করা হবে। স্কিমের আওতায় প্রদত্ত ঋণের অর্থ বা এর কোন অংশের সদ্ব্যবহার হয়নি মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট প্রতীয়মান হলে এবং বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে ৪ শতাংশের অধিক সুদ/মুনাফা আদায় করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সে পরিমাণ অর্থের ওপর নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত দুই শতাংশ হারে সুদ/মুনাফা ধাৰ্যপূর্বক এককালীন আদায় করা হবে।

রিপাের্টিং ও মনিটরিং

এ স্কিমের আওতায় বিতরণকৃত প্রতিটি ঋণের জন্য পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। (খ) বাংলাদেশ ব্যাংক হতে অর্থায়ন প্রাপ্তির পর নিবিড় মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে ঋণ বিতরণের পুঞ্জিভুত বিবরণী (সংযুক্ত ছক-২ মােতাবেক) বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগে মাসিক ভিত্তিতে (মাস সমাপনান্তে ০৭ কর্মদিবসের মধ্যে) দাখিল করতে হবে। কৃষক পর্যায়ে ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ব্যাংকের নিজস্ব সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং মনিটরিং পদ্ধতি থাকতে হবে যা অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদনকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময় সময় সরেজমিনে পরিদর্শন এবং তথ্যাদি যাচাইয়ের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে ঋণের সদ্ব্যবহার মনিটরিং এবং মূল্যায়ন করা হবে।

আরও পড়ুনঃ  উলিপুরে ফেন্সিডিল ও হেরোইনসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

ঋণ বিতরণের উদ্দেশ্যে প্রচারণা ও কৃষক নির্বাচন

পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় গম ও ভুট্টা চাষের জন্য ৪ শতাংশ সুদ/মুনাফা হারে কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম সম্পর্কিত তথ্যাদি উল্লেখ করে ব্যাংকের বাইরে সহজে দৃষ্টিগােচর হয় এমন স্থানে ব্যানার স্থাপন করতে হবে। এ স্কিমের আওতায় কৃষকদেরকে ঋণ গ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ফসল চাষের মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বেই সংশ্লিষ্ট শাখার মাধ্যমে বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে হবে। প্রকৃত কৃষক চিহ্নিত করণের লক্ষ্যে প্রয়ােজনে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহায়তা গ্রহণ করা যাবে।

তহবিল ব্যবস্থাপনা ৪ এ তহবিল সামগ্রিক তদারকি/পরিচালনা/ব্যবস্থাপনার কাজ বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয় এর কৃষি ঋণ বিভাগ কর্তৃক সম্পাদিত হবে এবং এ লক্ষ্যে কৃষি ঋণ বিভাগ প্রয়ােজনীয় শর্ত/বিধি অনুসরণের নির্দেশনা প্রদান করতে পারবে।

এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিলের প্রাপ্যতা সীমা বিবেচনা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ঋণ বিতরণ করবে এবং ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংক প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত এবং বর্তমানে অনুসৃত কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালাসহ অন্যান্য নীতিমালা যেমন জামানত, আবেদনপত্র গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণের সময়কাল, ঋণ গ্রহীতার যােগ্যতা নিরূপন, ঋণ বিতরণ, ঋণের সদ্ব্যবহার, তদারকি ও আদায় প্রক্রিয়া যথারীতি অনুসৃত হবে। ভুট্টা চাষে বিতরণকৃত ঋণসমূহের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন প্রাপ্ত হলে উক্ত ঋণসমূহের বিপরীতে ২২/০৫/২০২২ তারিখে জারিকৃত এসিডি সার্কুলার নং-০২ এ প্রদত্ত সুদ/মুনাফা ক্ষতিপূরণ সুবিধার আওতায় পুনরায় ভর্তুকির জন্য আবেদন করা যাবে না।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন