শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুবাই যাচ্ছে ডুমুরিয়ার শজনে পাতার গুড়ো

দুবাই যাচ্ছে ডুমুরিয়ার শজনে পাতার গুড়ো

দেশ-বিদেশে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ শজনে ও শজনেপাতার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে সারা বছর ব্যবহার করা দূরহ। এবার শজনেপাতা শুকিয়ে গুড়ো করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার নবদ্বীপ মল্লিক। স্থানীয় বাজারে বিক্রির পরে খুলনায় তৈরি শজনে পাতার গুঁড়ো এবার যাচ্ছে দুবাইয়ে। তিনি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেড় বিঘা জমিতে ৪০০টি গাছ লাগিয়ে শজনেপাতার বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। মাত্র আট মাসে তিনি এ কাজে সফলতার মুখ দেখেন।

আগস্টের শেষের দিকে সাতক্ষীরার ব্যবসায়ি আবু নাসের মোহাম্মদ আবু সাঈদের সহযোগিতায় শজনে পাতার গুঁড়ো দুবাইয়ে রপ্তানি করবেন নবদ্বীপ। ২ হাজার টাকা কেজিতে গুড়ো বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

কৃষিক্ষেত্রে সফল কৃষক নবদ্বীব মল্লিক বলেন, ডুমুরিয়ার বরাতিয়ায় দেড় বিঘা জমিতে ৪০০ পিস শজনেগাছের চারা লাগিয়েছিলাম জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। সেখান থেকে শজনে তুলেছি এবং বিক্রিও করেছি। শজনে হওয়ার পর গাছ ছাঁটাই করতে হয়। তাতে দেখলাম সংরক্ষণ করতে না পারায় প্রচুর পরিমাণে শজনেপাতা ফেলে দিতে হয়। তখন পাতা কাজে লাগনোর চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, বিষয়টি আবু নাসের মোহাম্মদ আবু সাঈদ ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে পাতাগুলো শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই। যেহেতু এই পাতা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না, তাই শুকিয়ে গুঁড়ো করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

তিনি জানান, দুই সপ্তাহ আগে গাছ থেকে প্রায় একশ’ কেজি পাতা কেটে শুকানো হয়। চার-পাঁচ দিন রোদে শুকানোর পর স্থানীয় মিলে গুঁড়ো করে ১৮ কেজি শজনেপাতার গুঁড়ো পেয়েছি। শজনেপাতার কিছু গুঁড়ো সাতক্ষীরার একটি শপিং মলে এবং বৃক্ষমেলায় বিক্রি করা হয়েছে। আর বাকি শজনেপাতার গুঁড়ো দুবাইয়ে রপ্তানির জন্য প্যাকিং করে মজুত রাখা হয়েছে। প্রথমে দুবাইয়ে এই পাউডার পাঠানো হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মুজিববর্ষের স্লোগান ব্যবহারের নির্দেশ

নবদ্বীপ বলেন, সম্প্রতি আমি ভারতের তামিলনাড়ুতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি, শজনেপাতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শজনে ৫০ থেকে ৬০ রুপি ও পাতার কেজি ৩০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। শজনেপাতার গুণাগুণ সম্পর্কে তাদের ভালো ধারণা রয়েছে। শুধু বিদেশে নয়, দেশের বাজারেও শজনেপাতার পাউডারের চাহিদা রয়েছে বলে জানান তিনি।

ব্যবসায়ী আবু নাসের মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনেছি বিভিন্ন দেশে শজনেপাতার পাউডার চড়া মূল্যে বিক্রি হয়। শজনেপাতার পাউডারে ৫৭ থেকে ৫৮ উপকারিতা রয়েছে। এক ছোট ভাই আছে, সে ১০০-এর মতো দেশে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে। তার মাধ্যমে স্যাম্পল হিসেবে মানসম্পন্ন কিছু পাউডার আগামী মাসে দুবাইয়ে পাঠানো হবে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, শজনে ও এর পাতায় ব্যাপক পুষ্টিগুণ রয়েছে। পাতা শুকিয়ে সংরক্ষণ করায় বেশিদিন গুনগতমান বজায় থাকবে। এই পাউডার পানিতে দুই থেকে ছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পান করলে ক্লান্তি দূর হয়। সম্প্রতি তামিলনাড়ু থেকে ঘুরে এসে কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক শজনেপাতার গুঁড়ো তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি অবশ্যই ভালো পদক্ষেপ। বিদেশে এই গুঁড়োর ভালো চাহিদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নবদ্বীপ দুবাইয়ে যে গুঁড়ো পাঠাচ্ছেন, তা দুই হাজার টাকা কেজিতে। তুলনামূলক মূল্য কম থাকায় বাংলাদেশের শজনের গুঁড়ো বেশি বিক্রি হবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, নবদ্বীপ মল্লিক শজনেপাতার গুঁড়ো তৈরির পর অনেক কৃষক এটি করতে আগ্রহী। এর চাহিদা বাড়লে দেশীয় কৃষি অর্থনীতিতে শজনেপাতার গুঁড়ো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন