শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছুতারদের পেশা বদল

ছুতারদের পেশা বদল
  • প্রযুক্তির ছোঁয়া

কালের বির্বতনে প্রাচীন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যর পেশা গরুর গাড়ি ও লাঙ্গল তৈরির কাঠমিস্ত্রি (ছুতার) হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় অন্যঞ্চলের মত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে পরিবহনে একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। কৃষিতে চাষ বলতে ছিল লাঙ্গল, জোয়াল, মই। কাঠমিস্ত্রির হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় বাঁশ, কাঠসহ নানা উপকরণে তৈরি করত গরুর গাড়ি। গাছের গুড়ি দিয়ে লাঙ্গলের রুপ দিত। নিত্যদিন মিস্ত্রিপল্লী গুলোতে কাঠ, বাঁশ, কুড়াল, হাতুড়ি, বাটালের ঠুকঠাক শব্দে মুখর হয়ে উঠত। চলত বছরজুড়ে। ছিল স্বাছন্দ জীবনযাপন। কিন্ত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ কৃষিতে এসেছে আধুনিকায়ণ। বর্তমান কৃষকরা হালচাষে লাঙ্গলের পরিবর্তে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর ব্যবহার করছেন। পরিবহনে নানা ধরণের বাহন। ফলে চাষাবাদে ঐতিহ্যবাহী কাঠ, বাঁশের হাতল ও লোহার ফাল বিশিষ্ট কাঠের লাঙ্গল এবং দুই চাকার গরুরগাড়ি বিলুপ্তির পথে। আর এসব সরঞ্জাম প্রস্তুতের প্রয়োজন না থাকায় হারিয়ে গেছে কাঠমিস্ত্রি পেশার কারিগর। কারিগরদের নামে পরিচিত মিস্ত্রিপাড়া গুলোতে এখন সুনশান পরিবেশ। এ পেশায় রসদ না থাকায় কারিগররা ভিড়েছেন অন্য পেশায়। দশগ্রাম ঘুরে এ পেশার কারিগর চোখে মেলাভার।

কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইসমাইল মাঝাপাড়া গ্রামের প্রবীণ মহিষের গাড়ি চালক ও হালচাষি আকালু জানান, একসময় চাষাবাদে অন্যতম উপকরণ ছিল কাঠের লাঙ্গল, কৃষিকাজ, ব্যবসা-বানিজ্য, যাতায়াতের সকল মাধ্যম ছিল গরু ও মহিষের গাড়ি। এসব প্রস্তত ও মেরামত করে জীবিকা নির্বাহ করত হাজারো নিম্ন আয়ের পরিবার। বর্তমান নানা ধরনের দ্রুতগতির যান্ত্রিকরণের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীরগতির গরুর হাল, গাড়ির ব্যবহার নেই বললে চলে। এতে গ্রামবাংলার জনপ্রিয় গরুর গাড়ি, কাঠের লাঙ্গল আজ বিলুপ্তির পথে। নতুন নতুন প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নয়ন ঘটছে। হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের এই ঐতিহ্যগুলো। হারিয়ে যাচ্ছে এর সাথে জড়িত পেশার কারিগররাও। বাহাগিলী ইঊপির ঊত্তর দুরাকুটি তাঁতিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গরুর গাড়ি ও লাঙ্গল, জোয়াল, মই তৈরির কারিগর ছলিম উদ্দিন এখন বৃদ্ধ। ৯০ বছর বয়সি এই বৃদ্ধের মাথায় উসকো-খুসকো চুল, মুখভর্তি সফেদ দাড়ি, বয়সের ভারে অনেকটাই নুয়ে পড়েছেন। তবুও এ পেশায় ভাগ্যের চাকা না ঘুরলেও অকৃত্রিম মমত্ববোধে বাব-দাদার পৈত্রিক পেশা আগলে রেখেছেন। তিনি জানান, এক সময় গরুর গাড়ির চাকা, হাড়ি, বিল্লি, পুটিয়া, গজসহ লাঙ্গল তৈরি কাজের চাপ ছিল। সেই গরুর গাড়ি কবেই উঠে গেছে। কদাচিৎ ২/১ জন কৃষক গরুর হাল ব্যবহার করলেও করছেন লোহার লাঙ্গল। তারপরও মৌসুম অনুযায়ী আলু, ভূট্টা, তামাকের ফসলি জমি পরিচর্যার চাহিদা থেকে হাতে টানা ছোট লাঙ্গল তৈরি করে চলছেন। গাছ কিনে নিয়ে এর গোড়া লাঙ্গল তৈরির জন্য রেখে অবশিষ্টাংশ জ্বালানি খড়ি হিসেবে বাজারে বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চলে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঐতিহ্য ধরে রাখা যেত।

আরও পড়ুনঃ  কর্মহীন-দুস্থ ৫০ পরিবার পেলেন ত্রাণ সামগ্রী

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, আগে যাতায়াত ও পরিবহনে গরুরগাড়ি ও হালচাষে লাঙ্গলের বিকল্প ছিলনা। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েই চলছে। এতে বাহনে গরু গাড়ি ও হালচাষে লাঙ্গলের ব্যবহার উঠে যাচ্ছে। কাজ না থাকায় কাঠমিস্ত্রি পেশার লোকজন হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা দরকার।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন