শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পটাশের তীব্র সংকট

পটাশের তীব্র সংকট
  • দিশেহারা আমন চাষি

রাজবাড়ীতে পটাশ সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে যেটুকু পটাশ সার মিলছে তাও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পরেছে জেলার আমন ধান চাষীরা। আর ইউরিয়াসহ অন্যান্য সার নির্ধারিত দাম থেকে কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সার ব্যবসায়ীদের দাবি এমওপি (পটাস) সারের সংকটের কারণে দাম বেড়েছে। আর পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির কারণে ইউরিয়াসহ অন্যান্য সারের দাম বেড়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় সারের কোন সংকট নেই। দাম বেশি রাখলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজবাড়ীর উপ পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে এ বছর আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। তবে বৃষ্টিপাত না থাকার কারণে আমন আবাদেেজলায় পিছিয়ে গেছে। গেল ২০ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় লক্ষ্য মাত্রার ৬০ শতাংশ জমিতে আমনের চারা রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। আর জেলায় আমন চাষি রয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার।

তবে কৃষককে প্রত্যেক প্রকার সারই বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামে কোনও সারই কিনতে পারছে না জেলার কৃষক। এমওপি (পটাস) সারের সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি ১৫ টাকা কিন্তু সেই সার জেলায় বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। তারপরও কৃষক বলেছে চাহিদামত এমওপি (পটাস) সার তারা পাচ্ছে না। আর আমন চাষে এই এমওপি (পটাস) সারের প্রয়োজন বেশি। এমওপি (পটাস) সার গাছের দ্রুত শেকড় বৃদ্ধি করে একই সঙ্গে গাছকে দ্রুত শক্ত করে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ  ঈদ বাজারে ক্রেতা নেই হতাশ বিক্রেতা

চাষিরা জানান, আমনের জমিতে সঠিক মাত্রায় এমওপি (পটাস) সার ব্যবহার করতে না পারলে ধানের ফলনে সমস্যা হবে।

ইউরিয়াসহ অন্যান্য সারও নির্ধারিত দাম থেকে কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা বেশি দাম কিনতে হচ্ছে। সরকার ইউরিয়া সারের দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও ২৫ থেকে ২৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। টিএসপি সারের দাম প্রতি কেজি ২২ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ টাকা কেজি। ডিএপি সারের দাম ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি রাখছে। জেলার পাঁচ উপজেলাতেই সারের দাম নিয়ে এই নৈরাজ্য চলছে।

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের চাষী কার্তিক শীল বলেন, ‘আমাদের ইউরিয়া কিনতে হচ্ছে ২৮ টাকা কেজি। আর পটাস সার দুই দিন ঘুরে ঘুরে পেয়েছি। পটাস কিনেছি ৩০ টাকা কেজি। টিএসপি সার ২৭ টাকা কেজি করে কিনেছি। সরকার টিভি পত্রিকায় যে দামের কথা বলে সেই দামে সার তো কিনতে পারি না। এখন আমন চাষে সার লাগে বেশি। এই সার কিনতেই তো ফতুর হয়ে যাবো এ বছর।’

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের বড় লক্ষী গ্রামের আতিয়ার রহমান  বলেন, ‘আমি রাজবাড়ী বাজার থেকে নির্ধারিত ডিলারের কাছ থেকে ১০০ কেজি ইউরিয়া সার কিনেছি। আমার কাছ থেকে ২৫ টাকা কেজি নিয়েছে। তাহলে গ্রামের খুচরা দোকানদার তো ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে সার বিক্রি করবেই। আসলে কৃষকের এই দুর্দশা দেখার কেউ নেই।’

রাজবাড়ীর সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের সারের ডিলার সহিদ হোসেন বলেন, আমাদের সার রাজবাড়ী পর্যন্ত নিয়ে আসার গাড়ি ভাড়া এখন আগের থেকে বেড়েছে। এরপর আমাদের কাছ থেকে সাব ডিলাররা সার নিয়ে যায় সেখানেও খরচ বেড়েছে। সার পরিবহন করতে গিয়ে অনেক নষ্ট হয় সেটিও আমাদের মধ্যে। সব মিলিয়ে আমাদের লাভ কমেছে। খরচ বেড়েছে। এই ডিলার সারের বেশি দাম নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, গত ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে আমাদের কোনও পটাস সার সরবরাহ নেই। এজন্য যাদের আছে তারা হয়ত বেশি দামে বিক্রি করছে।

আরও পড়ুনঃ  বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

বালিয়াকান্দি উপজেলার সার ব্যবসায়ী সনজিৎ সাহা বলেন, আমরা বেশি দামে বিক্রি করি না। গ্রামের যারা খুচরা ব্যবসায়ী আছে তারা বেশি দামে বিক্রি করে। কারণ সারা বছর কৃষক সার বাকি কিনে। এজন্য একটু দাম বেশি রাখতে পারে। তবে তিনিও বলেন, ১৫ দিনের বেশি সময় পটাস সারের সরবরাহ নেই।

রাজবাড়ী জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ব্যবসায়ীরা একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে প্রত্যেক সারের দাম বেশি নিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের উচিৎ ছিল এসবের বিরুদ্ধে শক্তভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দ্রুত এই সার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করলে আমন আবাদে প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে কৃষক নিঃস্ব হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস এম শহীদ নূর আকবর জানান, জেলার পাঁচ উপজেলার কোথাও কোন এমওপি (পটাস) সারের সংকট নেই। বর্তমানে জেলায় ১৩২ মেট্রিক টন এমওপি (পটাস) সার মজুত আছে। আর ইউরিয়াসহ অন্যান্য সার বেশি দামে সার বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন