শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলকাতায় ‘আপন ভাই’

কলকাতায় ‘আপন ভাই’
  • জাককানইবি শিক্ষার্থীদের যাত্রাপালা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিনীত যাত্রাপালা ‘আপন ভাই’ মঞ্চস্থ হয়েছে। গত সোমবার রাতে ভারতের কলকাতার জাহ্নবী সাংস্কৃতিক চক্র আয়োজিত দ্বিতীয় জাহ্নবী নাট্যমেলায় মুক্ত অঙ্গন রঙ্গালয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যাত্রাপালাটি প্রদর্শিত হয়েছে। আব্দুল আওয়াল সরকার রচিত যাত্রাটির নির্দেশনায় ছিলেন নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ মামুন রেজা।

যাত্রা পালাটির নির্দেশক ড. সৈয়দ মামুন রেজা জানান, যাত্রা বাঙালির একান্ত নিজস্ব নাট্যসম্পদ। তবে দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, যাত্রার মতো এতো শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম ক্রমশ আবেদন হারাচ্ছে। এক সময় যাত্রাশিল্প বাংলাদেশের বৃহত্তর সমাজ তথা গ্রামবাংলার সর্বস্তরের মানুষের কাছে ছিল বিনোদন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার প্রধানতম শিল্পমাধ্যম। বাঙালির দেশপ্রেম, ইতিহাসের পাঠ, বিপ্লবী চেতনা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনা ধারণে যাত্রাশিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত পালাটির কাহিনিতে দেখা যায়, ডা. সদরুল ও নসরুল দুই ভাই। ডা. সদরুল বিলেত থেকে ডাক্তারী পড়া শেষ করে নিজ গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার মহান পেশায় মনোনিবেশ করেন। তিনি রাজনীতি ও সমাজ সচেতন একজন ব্যক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। অন্যদিকে তাঁর ছোট ভাই নসরুল অর্থ-সম্পত্তির অপচয় ও আমোদ – ফূর্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। নসরুলের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা ডা. সদরুলসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া অনেককে ধরে নিয়ে নির্মম অত্যাচার করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যক্রম ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হবার লোভে নসরুল তার প্রেমিকাকেও পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়।

আরও পড়ুনঃ  গণহত্যা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ডা. সদরুল সুকৌশলে খান সেনাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে পূনরায় মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প দখল করে নেয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ডা. সদরুল জানতে পারেন তাঁর আপন ছোট ভাই নসরুল গোপনে পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে কাজ করেছে। পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পনের পরমূহুর্তে জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে এবং প্রতিশোধ নিতে নসরুল তার বড় ভাই ডা. সদরুলকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

এই যাত্রাপালায় মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ড. মো. কামাল উদ্দীন, পোশাক পরিকল্পনায় নুসরাত শারমিন এবং আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন মো. মেহেদী তানজির। পোস্টার ডিজাইন চারু পিন্টু।  এতে অভিনয় করেন শাহীন হোসেন সাজ্জাদ, আল মেহেদী হাসান, মামুন মিয়া, মো হুমায়ুন কবির, হুমায়রা আক্তার,  রাফাত আফরিন রমা, সাকলাইন আরাফাত, মো. নাঈম, সাদমান সাকিব, মো. সাকিব, ফুয়াদ পার্থ, সুমাইয়া আফরিন, ওয়াসিউ আল আজিজি, কাজী আমির হামজা প্রমূখ।

প্রদর্শনী শেষে নাট্যকলা বিভাগ ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাওয়া পুরো দলকে সম্মাননা স্বারক ও উত্তরীয় দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন